টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের আয় ও সম্পদ বেড়েছে। চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। হলফনামা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সংসদ সদস্যের পাশাপাশি তার স্ত্রী-ছেলেরও সম্পদ বেড়েছে।

২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দেয়া হলফনামায় (ক) অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে দেখানো হয়- আবু জাহির এমপির কৃষি খাতে বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার ও তার ছেলের ১০ হাজার টাকা। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে পান ৩ লাখ। ব্যবসা থেকে তার স্ত্রীর আয় ২৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯০৪ টাকা ও ছেলের আয় ৯ লাখ ৭০ হাজার ৫শ’ টাকা। জাহিরের নিজের কোন শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত না থাকলেও তার স্ত্রীর ৪১ লাখ ১০ হাজার ১৭৫ ও ছেলের রয়েছে ৮৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫৯ টাকা।

পেশা/সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ও ভাতা মিলে আবু জাহিরের বাৎসরিক আয় ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৬ টাকা। নগদ টাকা/বৈদেশিক মুদ্রা/ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তিন ক্যাটাগরিতে মিলে তার রয়েছে ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ টাকা। ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকার পোস্টাল, সেভিং সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ, বিমা ও ডিপিএস রয়েছে তার। রয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬২ হাজার ৭০৬ টাকা মূল্যের দুটি জিপ ও একটি মটর সাইকেল। স্ত্রীর ৪০ লাখ টাকার একটি জিপ গাড়ি। এমপির রয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার টাকার ৩১ ভরি স্বর্ণ। তার স্ত্রী ও ছেলের কাছে আছে যথাক্রমে ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ১০০ ভরি স্বর্ণ এবং ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকার ১০৮ ভরি স্বর্ণ।

হলফনামায় জাহিরের নামে দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। এ খাতে স্ত্রীর রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক পণ্য ও পুত্রের ৭ লাখ। হলফনামায় অর্জনকালীন সময়ের গাড়ি, স্বর্ণ ও ইলেক্ট্রনিক্স পরিমাণ এবং মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে।

হলফনামায় বলা হয়- মো. আবু জাহির এমপির নিজ নামে রয়েছে ৪২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার ১৩ কেদার কৃষিজমি। স্ত্রীর নামে আছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১৫ শতক বোরো জমি। ছেলের নামে আছে ৪৭ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৪ কেদার কৃষি জমি। কৃষিজমির ক্ষেত্রে অর্জনকালীন মূল্য ও পরিমাণ দেখানো হয়েছে। অকৃষি জমি ও অর্জনকালীন বাড়ি, বাসা, দোকান ও ঢাকার প্লট কোটায় এমপি আবু জাহিরের নিজের নামে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা ও হবিগঞ্জে ১৭.২০ শতক ভূমি রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে আছে ১০ কোটি ৭০ হাজার টাকার ৩২ শতক ভূমি। ছেলের নামে আছে ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫শ’ টাকার ১৩৫ শতক ভূমি। স্ত্রী ও ছেলের এ স্থাবর সম্পত্তির (খ) ক্ষেত্রের অর্জনকালীন সময়ের পরিমাণ ও মূল্য দেখানো হয়েছে। জাহিরের নামে হবিগঞ্জ পৌরসভায় ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ৮ হাজার ২৪৬ ও ঢাকায় ৪৮৪৬ বর্গফুটের রয়েছে ১৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট। এক্ষেত্রেও অর্জনকালীন মূল্য ধরা হয়েছে। আর ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের কাছে তার হোম লোন বাবদ রয়েছে ৭২ লাখ ৫৮ হাজার ৮শ’ ৫৯ টাকা ঋণ।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী এমপি আবু জাহিরের কৃষি খাতে বাৎসরিক আয় ছিল ৩০ হাজার ও ছেলের আয় ৫ হাজার। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে আয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৯শ’ টাকা। তবে তার স্ত্রীর আয় ছিল ৫২ হাজার ৫শ’, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংকে আবু জাহিরের আমানত ছিল ৮৬ হাজার ১৭৬ টাকা, স্ত্রীর ৮৪ হাজার ৬৩১ টাকা ও ছেলের আমানত ছিল ৪৫ হাজার ৪৫২ টাকা। আইন পেশা, সংসদ সদস্য হিসেবে বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫০ টাকা। আয়ের বিবরণীর অন্যান্য খাতে আবু জাহিরের কোন আয় না থাকলেও তার স্ত্রীর আয় দেখানো হয় ১০ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৯ টাকা ও ছেলের আয় ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ টাকা। তখন অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে এমপির নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা মিলিয়ে দেখানো হয় ১৩ লাখ ১২ হাজার ৩৮৯ টাকা। তার স্ত্রীর ২০ লাখ ১১ হাজার ৯৫৩ টাকা ও পুত্রের ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৭ টাকা।

বন্ড, ঋণপত্র ও কোম্পানির কোনো শেয়ার জাহিরের নিজের নামে না থাকলেও তার স্ত্রীর নামে দেখানো হয় ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৯২৫ টাকা ও ছেলের ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০২ টাকা। তখন সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৩৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৫ টাকা। স্ত্রীর বিনিয়োগ ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৪ টাকা ও ছেলের ২২ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৫ টাকা। এমপির দুটি জিপ গাড়ির মূল্য দেখানো হয় ১ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ৪৬৬ টাকা ও তার স্ত্রীর একটি কারের মূল্য ৪০ লাখ। তখন এমপি, তার স্ত্রী ও ছেলের স্বর্ণের পরিমাণ দেখানো হয় ১৩৪ ভরি। জাহিরের কোন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী না থাকলেও তার স্ত্রী ও পুত্রের ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার সামগ্রী দেখানো হয়। এমপি, তার স্ত্রী ও সন্তানের মোট আসবাবপত্রের মূল্য ছিল ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অন্যান্য কোটায় এমপির টাকার পরিমাণ দেখানো হয় ২ লাখ ২৩ হাজার ২৫০ টাকা। তার স্ত্রী ও ছেলের মোট ৩ লাখ। তখন তার স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে কৃষিজমি দেখানো হয় ১৩ কেদার। অর্জনকালীন হিসেবে যার মূল্য দেখানো হয় ৪২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর ১৫ শতক বোরো জমির মূল্য ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ছেলের ৪ কেদার জমির মূল্য ৪৭ লাখ। সংসদ সদস্যের নিজের নামে অকৃষি জমি, বাড়ি, দোকান হিসেবে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৫শ’ টাকার ভূমি রয়েছে। স্ত্রীর ৩২ শতক ভূমির মূল্য ১ কোটি ৭০ হাজার ও ছেলের সাড়ে ৭৭ শতক ভূমির মূল্য দেখানো হয় ৪২ লাখ ২৩ হাজার ৫শ’ টাকা। হবিগঞ্জে নিজের নামে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৩ টাকা মূল্যে একটি দালান দেখানো হয় তার। তখন জাহির ও তার পরিবারের কারোর কোনো দায় বা ঋণ ছিল না।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরের বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৩৮ টাকা। তার স্ত্রী ও ছেলের আয় দেখানো হয় ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে এমপি আবু জাহিরের নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা মিলিয়ে দেখানো হয় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩১২ টাকা। এক্ষেত্রে স্ত্রীর ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৮ টাকা ও ছেলের দেখানো হয় ৭৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এমপি ও তার ছেলের নামে বন্ড, ঋণপত্র এবং কোম্পানির শেয়ার না থাকলেও স্ত্রীর নামে দেখানো হয় ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৯২৫ টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ হিসেবে নিজের নামে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪০ টাকা ও স্ত্রীর নামে ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৪ টাকা। তখন গাড়ি বাবদ তার নামে দেখানো হয় ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৬ টাকা ও ছেলের ১৬ লাখ টাকা। এমপি, তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছে মোট ৬১ ভরি স্বর্ণ ছিল।

এমপির নিজের কোন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী দেখানো না হলেও তার স্ত্রী ও ছেলের ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার সামগ্রী ছিল। তার ২৫ হাজার টাকার আসবাবপত্রের পাশাপাশি তার স্ত্রীর ৫০ হাজার ও ছেলের ছিল ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র। তখন ৪০ হাজার টাকার ১০ কেদার কৃষি জমি, ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ৫শ’ টাকার ২৭ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’ টাকার দালাল ও ৬০ হাজার টাকার একটি গ্যারেজ ছিল জাহিরের। তার স্ত্রীর ২২ শতক পুকুরের মূল্য দেখানো হয় ১৮ লাখ ১০ হাজার। এ হলফনামায় এমপির ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকার সুদমুক্ত ঋণ দেখানো হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি আবু জাহিরের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়- নিজের বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৯০ টাকা। নগদ টাকা, ২৬ ভরি স্বর্ণ, গাড়ি, আসবাবপত্রসহ অস্থাবর সম্পত্তি ৩৬ লাখ ২ হাজার ৮০৪ টাকার এবং কৃষি, অকৃষি, আবাসিক/বাণিজ্যিক দালানসহ স্থাবর সম্পত্তি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৯৪ টাকার সম্পদ ছিল। আর স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৮ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৪ টাকার অস্থাবর এবং স্থাবর সম্পত্তি ১৪ শতাংশ ভূমি, যার মূল্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৪ টাকার সম্পত্তি। তবে সন্তানদের কোনো সম্পদ নেই।

আজহারুল মুরাদ/পিএইচ