মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা গেল আওয়ামী লীগ নেতার পকেটে
প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের আল হেলাল জামে মসজিদে বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় মসজিদের জন্য ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। বরাদ্দকৃত সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলটি স্থাপনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারীকে। কিন্তু তিনি মসজিদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলটি স্থাপন না করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
টাকা আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার নামে একটি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেছেন। মামলা হওয়ার পরেও মসজিদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন বা টাকা ফেরত দেননি আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারী।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১০ ডিসেম্বর) শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারী গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আল হেলাল জামে মসজিদ কমিটি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ভিমখিল বাজারের আল হেলাল জামে মসজিদের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের বরাদ্দ পাস হয়। সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলটি মসজিদে স্থাপনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী কুচাইপট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি মসজিদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলটি স্থাপন না করে বরাদ্দের ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
পরে ২০১৭ সালে রাজকীয় প্রাপ্য আদায় বিষয়ক ১৯১৩ সালের ৪/৬ ধারা মতে তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হয়। মামলায় ৩০ দিনের মধ্যে প্রাপ্য সমুদয় অর্থ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়। টাকা পরিশোধ না করলে জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারীর স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ বিক্রয় বা বন্ধক রাখতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু এক মাসের স্থলে ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারী টাকা ফেরত দেয়নি। ২০১৭ সাল থেকে এখন অবধি নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ দিয়ে বারবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে টাকা জমা দিতে বললেও তিনি কোনো নোটিশের সাড়া দেননি।
আল হেলাল জামে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ রফিক বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় আমাদের মসজিদে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। মসজিদে একটি ব্যাটারি দিয়ে কোনো মতে আলো জ্বালিয়ে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। মসজিদের নামে এতগুলো টাকা মূল্যের সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বরাদ্দ হলো অথচ মসজিদ সেই সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল পেল না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার। সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলটি পেলে মুসল্লিরা আরামে নামাজ পড়তে পারতো। মঞ্জু বেপারী মসজিদে কোনো ইটও কিনে দেন নাই।
কুচাইপট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মসজিদে আমি ওই সময় আড়াই হাজার ইট কিনে দিয়েছি। প্রতি হাজার ইটের মূল্য তখন ছিল সাড়ে ৬ হাজার টাকা। মাস্টার রুল জমা দেইনি বলে মামলা হয়েছে। শিগগিরই মাস্টার রুল জমা দিয়ে আসব পিআইও অফিসে। জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারীর কথা অনুযায়ী তৎকালীন আড়াই হাজার ইটের মূল্য ১৬ হাজার ২৫০ টাকা।
গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইকবাল কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আল হেলাল জামে মসজিদের নামে একটি সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল বরাদ্দ হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী জহির উদ্দিন মঞ্জু বেপারীকে প্যানেলটি স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলটি মসজিদে স্থাপন না করায় তার নামে সার্টিফিকেট মামলা করা হয়। মামলার পরেও তিনি টাকা ফেরত দেননি। এমনকি মামলার কোনো নোটিসেরও জবাব দেননি।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/এএএ