রুহুল আমিন হাওলাদার

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি) আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের ১৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৩৬ গুণ। বর্তমানে সব মিলিয়ে তার সম্পদ রয়েছে ৭৬ কোটি ১৯ লাখ ৮ হাজার ৪৮৭ টাকা। এছাড়া তার ভিসা কার্ডে রয়েছে ৭০০০ ইউএস ডলার অথচ তার ব্যাংকে নিজের এবং তার প্রতিষ্ঠানসহ সব মিলিয়ে ঋণ রয়েছে ৩৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫ টাকা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে রুহুল আমিন হাওলাদারের দাখিল করা হলফনামা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

হলফনামা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন উৎস থেকে  রুহুল আমিন হাওলাদারের বছরে আয় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। এর মধ্যে, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৬৬৬ টাকা। এছাড়া শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ১১ লাখ ১৬ হাজার ৫৫০ টাকা ও ব্যাংক আমানত থেকে ৫ হাজার ৫৩২৬ টাকা এবং ডিভিডেন্ট থেকে ৮৭ হাজার ৬৭ টাকা পান। তিনি বার্ষিক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। 

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় মোট সম্পদ ছিল ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৮ টাকা এবং তবে সে সময়ে তার বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ ছিল ৬২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৮ টাকা। এছাড়া দশম সংসদ নির্বাচনে ছিল ২৭ কোটি ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩০০ টাকা ও পৈতৃক সূত্রে ৩০ কাঠা জমি এবং ব্যাংক ঋণ ছিল ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮ হাজার ৯৭৪ টাকা। তবে নবম সংসদ নির্বাচনের সময় ২ কোটি ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৪৫ টাকা এবং পৈতৃক সূত্রে ৩০ কাঠা জমি ছিল। কিন্তু ওই সময়ে কোনো ব্যাংক ঋণ উল্লেখ্য ছিল না। তবে স্ত্রী আত্মীয়-স্বজন এবং বাড়ি ভাড়া অগ্রিমসহ ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৫ হাজার ২১৫ টাকা দায় ছিল তার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রুহুল আমিন হাওলাদার নিজের এবং তার স্ত্রীর যে সম্পদ দেখিয়েছেন তাতে তার নগদ টাকা ও ব্যাংক জমার স্থিতিসহ ২৬ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫২ টাকা, তার স্ত্রীর রয়েছে ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৪ টাকা। তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৭ টাকা ও তার স্ত্রীর আছে ২২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮১ টাকা। বন্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ারে তার রয়েছে ৭ কোটি ৭০ হাজার টাকা, তার স্ত্রীর রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। পোস্টাল ও সেভিংস এবং বিভিন্ন বিনিয়োগে রয়েছে ৩ কোটি টাকা, তার স্ত্রীর রয়েছে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩১ টাকা। 

এছাড়া রুহুল আমিন হাওলাদার দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন, যার মূল্য ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে তার স্ত্রী ১ কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩০ টাকার একটি গাড়ি ব্যবহার করেন। তার ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ও তার স্ত্রীর ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার। তার আসবাবপত্র আছে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার, তার স্ত্রীর রয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার। 

রুহুল আমিন হাওলাদারের আগ্নেয়াস্ত্র ৯ এম.এম পিস্তল, ২ বোর রাইফেল, দোনালা বন্দুক, ৩২ সিলভার ও শর্টগান রয়েছে, যার মূল্য দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার নামে ৮০ তোলা ও তার স্ত্রীর ১০০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে, যার মূল্য তিনি উল্লেখ করেননি। তিনি তার স্ত্রীকে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছেন আর তার স্ত্রী কন্যাকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন বলে দেখিয়েছেন। এছাড়া রুহুল আমিন হাওলাদারের আইএফআইসি ব্যাংকের ভিসা কার্ডে ৭০০০ ইউএস ডলার আছে।

এদিকে রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্নার গত ১৫ বছরে (২০০৮ সালের হলফনামা থেকে) স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬ গুণ। বর্তমানে তার সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৭ টাকার সম্পদ রয়েছে ।

রুহুল আমিন হাওলাদারের নিজের নামে কৃষি জমি আছে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৫ টাকার। অকৃষি জমি আছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৪ টাকার। তার স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি আছে রয়েছে ৭৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪২ টাকার। এছাড়া তার (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) দালান আছে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ৭০ হাজার ৬৯ টাকার এবং তার স্ত্রীর বাকেরগঞ্জে ১০ লাখ টাকার বসতভিটা ও পৈতৃক সূত্রে ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর