করোনার ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় শ্রমিকরা, গুনতে হচ্ছে ৫ গুণ ভাড়া
সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও খোলা রয়েছে বেশিরভাগ পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মপরিবেশ তৈরি করলেও শ্রমিকরা আছেন করোনা আতঙ্কে। কারখানার নিজস্ব পরিবহনে শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সেটা মানছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে রিকশা, ভ্যান ও পিকঅ্যাপ ভ্যানে করে কারখানায় যেতে শ্রমিকদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫ গুণ।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন শিল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাজের উদ্দেশ্যে দলে দলে কারখানায় যাচ্ছেন পোশাক কর্মীরা। তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের অভাব থাকলেও স্বাস্থ্য সচেতন অধিকাংশ শ্রমিক। নিজেরা সচেতন হলেও কাজ করতে হবে একই ছাদের নিচে। তাই মনে আতঙ্ক নিয়েই চাকরি ও সংসার বাঁচাতে কারখানামুখী হচ্ছেন শ্রমিকরা।
বিজ্ঞাপন
শাহিনুর নামে এক পোশাক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকে। তাই কাজে মন বসে না। আর যাতায়াতেও কষ্ট হয়, টাকা লাগে বেশি। তারপরও সমস্যা নেই। কিছু শ্রমিকের অসচেতনতার কারণে আমরা ভয় পাই। তাদের সতর্ক করলেও কথা শোনে না। এজন্য ভয় পাচ্ছি। এসব অসচেতন শ্রমিকদের কাছ থেকেই ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা।
পিকআপ ভ্যানে কারখানায় যাচ্ছেন সাবিনা। তিনি বলেন, লকডাউনে আমাদের কারখানা যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। নারী শ্রমিক হয়েও অনেক কষ্টে পিকআপ ভ্যানে উঠেছি। গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় যেতে হচ্ছে। ভাড়াও ৫ গুণ বেশি। বাড়ইপাড়া থেকে ডিইপিজেডে আগে বাস ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন ৫০ টাকায় যেতে হচ্ছে। এখনো কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আরেক শ্রমিক আব্দুল হাই বলেন, বেশ কয়েকটি স্তরে ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিকের হাত ঘুরে কোনো একটি পণ্য উৎপাদিত হয়। এক্ষেত্রে করোনার শঙ্কা থেকেই যায়। তাই কাজে যেতে একটু ভয় করে। তাছাড়া আর কোনো ঝামেলা নেই। আমরা কারখানার আশেপাশেই ভাড়ায় থাকি। এখানে লকডাউনে রিকশা ভাড়া বেড়ে যায়। পোশাক শ্রমিকদের জন্য আলাদা কোনো পরিবহন সার্ভিস নেই। শুধু শ্রমিকদের জন্য পরিবহন সার্ভিসের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা অতীতের রেকর্ড দেখেছি। কারখানা বন্ধ থাকলে কোনো শ্রমিকই কর্মস্থলে থাকতে চায় না। তারা কোনো না কোনোভাবে গ্রামে চলে যায়। আর করোনার জীবাণু শহর থেকে সাপ্লাই হয় গ্রামে। এ ছাড়া বাস-ট্রাকে গাদাগাদি করে গ্রামে ফিরে যায় তারা। এদিক থেকে কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত যেমন যৌক্তিক তেমনি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাও জরুরি। আশা করছি, প্রতিটি কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। তাছাড়া লকডাউনের কোনো মূল্য থাকবে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ক্রান্তিলগ্নে শুধুমাত্র পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। কঠোর লকডাউনে শ্রমিক বলেই কাজে যাচ্ছে তারা। শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাই তাদের শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবি জানাই। শ্রমিকদের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করেনি। এ ব্যাপারে কারখানা মালিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এসপি/জেএস