১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল, সবকটি নির্বাচনেই জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি) আসন ছিল বিএনপির দখলে। তবে দৃশ্যপট পাল্টে যায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণে সেবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম দুদু। সেসময় হলফনামায় ২০ লাখ ২৮ হাজার ২০০ টাকা দেখানো দুদু বর্তমানে দেড় কোটি টাকার মালিক।

শুধু তাই নয় তার স্ত্রীর সম্পদও হয়েছে বিপুল অঙ্কের। স্ত্রীর আয় ১০ লাখ ৩১ হাজার থেকে ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪১২ টাকা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকার পূর্বাচলে একটি প্লটও রয়েছে তার। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার স্ত্রীর থাকা ১৪ ভরি সোনা কমে এবার ৪ ভরিতে এসেছে। আর এর অর্জনকালীন সময়ের দাম ধরা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে এই প্রার্থীর বিগত নির্বাচনের হলফনামাগুলো বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

তার তিনটি হলফনামার সম্পদ বিবরণীর তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে নির্বাচনে সামছুল আলম দুদু নিজের বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন কৃষি খাতে ৩০ হাজার, ব্যবসায় ৬০ হাজার, গরুর খামার ১ লাখ ২৫ হাজার ২০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদে নিজের নামে ছিল নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার টাকা। আর ১ লাখ ১০ হাজার টাকার একটি মোটরসাইকেল ছিল তার। এ ছাড়া ১৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি টেলিভিশন, ৪২ হাজার টাকার একটি ফ্রিজ, ১২ হাজার টাকার ওভেন, ২১ হাজার টাকার তিনটি খাট, ৩০ হাজার টাকার তিনটি সোফা ও ১০ হাজার টাকার স্টিল আলমারি ছিল দুদুর। স্থাবর সম্পদে ৯ লাখ টাকার ১০ বিঘা কৃষি জমি, ২ লাখ ২০ হাজার টাকার ২২ শতক অকৃষি জমি, ৪ লাখ টাকার দ্বিতল পাকা বাড়ি, টিনশেডের বৈঠকখানা ও গরুর খামার থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে দুদুর।

তার স্ত্রীর ছিল ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি মাইক্রোবাস, ৮৪ হাজার টাকার মূল্যের ১৪ ভরি সোনা, ২১ হাজার টাকার তিনটি খাট, ৩০ হাজার টাকার তিনটি সোফা এবং একটি টিভি ও ফ্রিজ।

২০১৮ সালে হলফনামায় সামছুল আলম দুদু আয়ের সঙ্গে ঋণ থাকার কথাও উল্লেখ করেন। সামছুল আলম দুদুর কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় ছিল ৪০ হাজার টাকা। অন্যান্য ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫০ টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৭ লাখ ৮০ হাজার ২৯৪ টাকা।

অস্থাবর সম্পদে প্রার্থীর নিজ নামে দেখানো ছিল নগদ ৭ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ২৪ হাজার ৬০০ টাকা। ৫১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬০ টাকা দামের ল্যান্ডক্রুজার একটি গাড়ি। এক লাখ টাকা মূল্যের টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ও ওভেন রয়েছে। ৫০ হাজার টাকার তিনটি করে খাট, সোফা ও একটি স্টিলের আলমারি রয়েছে। তার স্ত্রীর রয়েছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি মাইক্রোবাস, ২৪ হাজার টাকার একটি টিভি, ২৫ হাজার টাকার ফ্রিজ, ২১ হাজার টাকার তিনটি খাট ও ৩০ হাজার টাকার তিনটি সোফা ছিল।

তবে সেবার তার স্ত্রীর সোনা কমে ৪ ভরিতে এসেছে। আর এর অর্জনকালীন সময়ের দাম ধরা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদে নিজের নামে রয়েছে ১০ বিঘা কৃষি জমি, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১২ শতক অকৃষি জমি। ২ লাখ ১০ হাজার টাকার একটি দ্বিতল পাকা বাড়ি, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার টিনশেডের বৈঠকখানা ও ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার গরুর খামার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর ঢাকার পূর্বাচলে ৬ লাখ টাকার ৩ কাঠার একটি প্লট কিনেন তিনি। তবে সেসময় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পাঁচবিবি শাখা থেকে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৮৯২ টাকা ঋণ ছিল বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ কথা হয়েছিল।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর এই পাঁচ বছরে সামছুল আলম দুদুর আয়ের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বেড়েছে তার ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি, পূর্বাচলেরও প্লটের দামও। এমনকি ব্যাংকেও জমা রয়েছে কয়েক লাখ টাকা। তবে এবার ঋণ নেই এই সংসদ সদস্যের।

এবারের হলফনামায় দেখা যায়, কৃষি খাত থেকে সামছুল আলম দুদুর বার্ষিক আয় এক লাখ টাকা। অন্যান্য ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৫০ টাকা। অস্থাবর সম্পদে প্রার্থীর নিজ নামে রয়েছে নগদ ২ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ৮০০ টাকা। ল্যান্ডক্রুজার গাড়িটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ৬৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। এক লাখ টাকার টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ও ওভেন রয়েছে। ৫০ হাজার টাকার ৩টি করে খাট, সোফা ও একটি স্টিলের আলমারি রয়েছে।

তার স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার ১২ টাকা। ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি মাইক্রোবাস, ২৪ হাজার টাকার একটি টেলিভিশন, ২৫ হাজার টাকার ফ্রিজ, ২১ হাজার টাকার তিনটি খাট ও ৩০ হাজার টাকার তিনটি সোফা রয়েছে। ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ৪ ভরি সোনা রয়েছে।

স্থাবর সম্পদে দুদুর নামে রয়েছে ৩০ লাখ টাকার মূল্যে ১০ বিঘা কৃষি জমি, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১২ শতক অকৃষি জমি। ৫ লাখ টাকার একটি দ্বিতল পাকা বাড়ি, ৩ লাখ টাকা মূল্যের টিনশেডের বৈঠকখানা ও গরুর খামার। ঢাকার পূর্বাচলের ৩ কাঠার ওই প্লটটির দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। বিগত হলফনামাগুলোতে স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ না থাকলেও এবার ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা দামের ১১ শতক অকৃষি জমি থাকার কথা রয়েছে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পূর্ব বালিঘাটার বাসিন্দা সামছুল আলম দুদু। তার স্ত্রীর নাম মেহের নেগার শিউলী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এমএ পাস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করা সামছুল আলম দুদু জয়পুরহাট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র ছিলেন।

এমজেইউ