দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে চতুর্থবারের মতো মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এ সভাপতি এর আগে এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল কাদের সোহেলসহ ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তবে দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এখন পর্যন্ত টিকে আছেন ৬ জন।

এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্য সম্পদ সবচেয়ে বেশি নাজমুল হাসান পাপনের। নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের হলফনামা অনুযায়ী নাজমুল হাসান পাপনের বার্ষিক আয় ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৮ টাকা এবং ব্যয়ের পরিমাণ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৬৫ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি তার মনোনয়নপত্রে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৫ কোটি ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫১ টাকা এবং ব্যয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৭ টাকা। এতে এবার দেখা যায় তার বার্ষিক আয় ৫৮ গুণ বেড়েছে।

মনোনয়নপত্রে নাজমুল হাসান পাপন পেশা হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড কোম্পানিতে চাকরি লিখেছেন। চাকরি করে তার বেতন থেকে বার্ষিক আয় ৭ কোটি ৬২ লাখ ১০৯৯ টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা পেয়েছেন ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টাকা। 

তিনি তার সম্পদ থেকে ভাড়া বাবদ আয় করেন ২১ লাখ ৩০ হাজার ২৭৫ টাকা, সিকিউরিটি বন্ড, ব্যাংকে আমানতসহ অন্যান্যতে আছে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ৩১৪ টাকা এবং তার সঞ্চয়পত্র আছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা।

নগদ ও ব্যাংকে জমা আছে তার ২৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৯ টাকা, বন্ড ও অন্যান্যতে আছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৩৯ টাকা। তার স্ত্রী রোকসানা সুলতানার নগদ আছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ২০০ টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৯০ হাজার ২৭৭ টাকা। পোস্টাল ও সেভিংসে আছে ১ কোটি টাকা ও তার স্ত্রীর আছে ১ কোটি টাকা। অ্যাপার্টমেন্ট আছে ৫টি, তার মধ্য ৪টি পৈতৃক থেকে পাওয়া এবং ১টি কেনা যার মূল্য ৮৭ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। স্ত্রীর নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে যার মূল্য ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার টাকা।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে তার ২৬৯.৭৫ শতাংশ জমি ও ৩৫.৭৮ কাঠা জায়গা আছে যার মূল্য ৪ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ টাকা। এছাড়া টিভি, ফ্রিজ, এসিসহ আসবাবপত্র আছে একাধিক যার মূল্য ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার নামে বীমা আছে ৯৬ লাখ ৩ হাজার ২৩ টাকা এবং স্ত্রীর নামে বীমা আছে ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। পাপনের পরিবারের স্বর্ণ আছে ৫০০ ভরি, যার মূল্য তিনি জানেন না, সব স্বর্ণ উপহার থেকে পাওয়া।

নাজমুল হাসান পাপন লেখাপড়ায় এমবিএ পাস। নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের হলফনামায় তিনি এসব সম্পদের বিবরণী উল্লেখ করেন।

এছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল কাদের সোহেল তার মনোনয়নপত্রের হলফনামায় উল্লেখ করেন তার বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা। তার নিট সম্পদের পরিমাণ ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ইলেকট্রিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে তার। সব মিলিয়ে এসব দ্রব্যের দাম ৩ লাখ টাকা। তিনি এইচএসসি পাস।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী মো. রুবেল হোসেনের বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৩০ হাজার ৪০৯ টাকা এবং ব্যয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিনি লেখাপড়ায় স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী হেলাল উদ্দিনের বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকা এবং বার্ষিক ব্যয় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৫০ টাকা।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসন থেকে ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। ২০০৯ সালে দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তার ছেলে নাজমুল হাসান পাপন বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এমএসএ