টাঙ্গাইল-৪ একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। সেখানে তিন বারের সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আলোচিত আওয়ামী লীগের সাবেক এ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাংক সুদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধার ভাতা ছাড়া আয়ের আর কোনো উৎস নেই।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আয়ের উৎস বেড়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কমেছে জমির পরিমাণ। দশম নির্বাচনে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে অর্থ থাকলেও বর্তমানে স্ত্রীর নামে কোনো অর্থ নেই। চারটি সংসদীয় নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথম ১৯৯৬ সালে, দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ও তৃতীয়বার ২০১৪ সালে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে লতিফ সিদ্দিকী দশম মন্ত্রিসভার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। 

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে হজ ও তবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। এরপর ইসলামপন্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন। এরপর মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন তিনি।

এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কৃষিখাত, বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান, ব্যবসা, শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক, চাকরি বা অন্যান্য কোনো খাতে আয় নেই তার। শুধুমাত্র ব্যাংক সুদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে আয় হয়। 

সব মিলিয়ে তার বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৪ টাকা। তবে গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধুমাত্র ব্যবসা থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার, দশম নির্বাচনে মন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শকসহ মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা বাৎসরিক ছিল ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা এবং ব্যাংক সুদ পেতেন ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫৮ টাকা। একাদশ নির্বাচনে শুধুমাত্র শিক্ষকতা ও লেখক সম্মানী ২ লাখ ৫০ হাজার এবং ব্যাংক সুদের আয় ছিল ১৪ হাজার ৬৩৯ টাকা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নির্ভরশীল আয় ছিল ১৫ হাজার। এরপর দশম, একাদশ ও এবার দ্বাদশ নির্বাচনে নির্ভরশীল আয় দেখানো হয়নি।

অস্থাবর সম্পত্তি : 

বর্তমানে তার নগদ দেখানো হয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৮২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৩৫৯ টাকা। রয়েছে টয়োটা জীপ কার, বৈবাহিক সূত্রে প্রাপ্ত হিসেবে স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। তবে দশম নির্বাচনে নগদ ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০টাকা। রুপালী ব্যাংকে ৭ হাজার ৩৫ এবং সাউথইস্ট ব্যাংকে ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ১৯৬ টাকা। এছাড়া একাদশ নির্বাচনে নগদ টাকা ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৭, রুপালী ব্যাংকে ১৫১৫ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংকে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৬ টাকা এবং সোনালী ব্যাংকে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬৮ টাকা।

স্থাবর সম্পত্তি : 

বর্তমানে তার নামে কালিহাতীর ছাতিহাটীতে ৩৯ শতাংশ পতিত জমি, গাজীপুরের কাউলাটিয়ায় ১.৮৭ একর জমি রয়েছে। এছাড়া স্বামী ও স্ত্রীর নামে সংসদ সদস্য হিসেবে ৬ কাঠা, কালিহাতীতে এওয়াজমুলে ৭ শতাংশ এবং আত্মীয় হিতৈষীদের দ্বারা একটা ভবন রয়েছে। 

দশম নির্বাচনে নিজ নামে টাঙ্গাইলে ৬৬ শতাংশ, গাজীপুরের কাউলাটিয়া ১.৮৭ একর ও ছাতিহাটীতে ৩৯ শতাংশ পতিত জমির থাকার উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়া স্বামী ও স্ত্রীর নামে শিতলপুর ও বনবাড়ীতে ২.২৮ একর, ঢাকায় ৬ কাঠা, কালিহাতীকে এওয়াজ মূলে ৭ শতাংশ, ঢাকায় ব্যাংক ঋণে একটি দালান বা ভবন এবং কালিহাতীতে একটি ভবন থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল।  

বর্তমান পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, লেখক ও গবেষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একাদশে লেখক, গবেষক ও অন্যান্য। দশমে মন্ত্রী, লেখক, গবেষক ও অন্যান্য। নবমে পেশায় উল্লেখ করেছিলেন, অন্যান্য (রাজনীতিক) পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের মামলাটি উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত রয়েছে।

অভিজিৎ ঘোষ/এমএসএ