পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন রুবেল পারভেজ। ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন। পড়িয়েছেন ছোট দুই ভাইকে। তার কষ্ট বিফলে যায়নি। যখন নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুখের সংসার উপভোগ করার সুযোগ এলো তখনই যেন ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল সব। সেলফি পরিবহনের বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে গেল ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত রুবেল পারভেজের জীবন। বাবার আদর বোঝার আগেই এতিম হয়ে গেল তার ১৬ মাসের মেয়ে। 

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকার ধামরাই বাসস্ট্যান্ডে সেলফি পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে নিহত হন ২ পথচারী। তার মধ্যে একজন হলেন বিসিএসে সুপারিশ প্রাপ্ত রুবেল পারভেজ। 

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার মোকছেদ আলীর ছেলে রুবেল পারভেজ জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চাকরির পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে তিনি সুপারিশ প্রাপ্ত হন। তবে তার পুরো পরিবারসহ ধামরাইয়ে বসবাস করতেন।

রুবেল পারভেজের চাচা জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হিল কাফি বলেন, নিহত রুবেল আমার ভাতিজা হয়। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সে। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচসহ পরিবার চালাত। পরে একটি ব্যাংকে চাকরি করে ভাইদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। আজ যখন বিসিএস এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে তখনই তার প্রাণ কেড়ে নিল সেলফি পরিবহনের বাস।

নিহতের স্ত্রী ফারজানা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকাপোস্টকে বলেন, আমাদের বিয়ে হয়েছে দুই বছরের কিছু বেশি। আমাদের সন্তানের বয়স মাত্র ১৬ মাস। মেয়েটা প্রতিদিন বাবার জন্য অপেক্ষা করতো। ওর বাবা বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘর যেন বেহেস্ত হয়ে যেতো আমাদের। এখন রাইসা কার জন্য অপেক্ষা করবে। আমার মেয়েটা বাবার আদর বোঝার আগেই এতিম হয়ে গেল। আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচব। আমার অবুঝ মেয়েটাকে আমি কি দিয়ে বোঝাব। 

তিনি বলেন, রুবেল বলতো জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। এবার রাইসার বাবা বিসিএস কর্মকর্তা হবে। রাইসার বাবার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। অথচ কি হয়ে গেল? আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব?

নিহতের ভাই সোহেল পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই আমার বাবার ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা তিন ভাই এক বোন। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে বাবার মতো দায়িত্ব নিয়ে তিনি আমাদের বড় করেছেন। তিনি আমাদের সব চাহিদা পূরণ করতেন। তিনি বলেন, আমরা তো আমাদের বটবৃক্ষের মতো ভাইকে হারালাম। আমি এই পরিবহনের রুট পারমিট বন্ধের দাবি জানাই। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

সেলফি পরিবহনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, আমরা সাত দিন পরপর মিটিং করি। চালকরা আমাদের কথা শোনে না। মাইক দিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হলেও তারা ভুলে যায়। চালকদের বারবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

মাহিদুল মাহিদ/আরকে