বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু পেশায় একজন কৃষক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আসনটি থেকে আবারও লড়বেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। ইকবাল হোসেন অপুর নিজস্ব কোনো জমি নেই, নেই কোনো গাড়ি-বাড়ি। 

পাঁচ বছর আগে অকৃষি পাঁচ কাঠা জমি থাকলেও এখন তাও নেই তার। নগদ টাকা ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানতসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ কমেছে সাংসদ ইকবাল হোসেন অপুর। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লাখ টাকা জমা থাকলেও এখন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো টাকা জমা নেই তার স্ত্রীর নামে। তবে ইকবাল হোসেন অপু ও তার স্ত্রীর নগদ টাকা বেড়েছে। কিন্তু তা তুলনামূলক খুবই কম।

ইকবাল হোসেন অপু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রায় সময়ই প্রত্যন্ত গ্রামের মেঠোপথ পরে ভ্যান গাড়ি বা পা হেঁটে গ্রামের ভূমিহীন কৃষকদের সঙ্গে চা খাওয়ার উছিলায় তাদের সাংসারিক জীবনসহ কৃষি কাজের খোঁজ খবর নিতেন। অন্যান্য সব সাংসদ থেকে আলাদা হয়ে কেন তিনি এমন কাজ করতেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অনেক খানিই দিয়ে দিয়েছেন তার নির্বাচনী হলফনামা। ছাত্রলীগের তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা ইকবাল হোসেন অপুর নামে দণ্ডবিধি ৩৮৫ ও ৫০৬ ধারায় ঢাকা মহানগর যুগ্ম দায়রা জজের ষষ্ঠ আদালতে একটি মামলা ছিল। মামলাটি থেকে তিনি ২০১০ সালে খালাস পেয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী ইকবাল হোসেন অপু এম.এ পাস। ছাত্রলীগের তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা ইকবাল হোসেন অপুর ৫ বছর আগে বাৎসরিক আয় ছিল ২২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯৩ টাকা। সংসদ সদস্য হওয়ার পরে বাৎসরিক আয় বেড়েছে তার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার বাৎসরিক আয় ৫২ লাখ ২ হাজার ৩৩৪ টাকা।

ইকবাল হোসেন অপুর ওপর নির্ভরশীলদের পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমানে তার ওপর নির্ভরশীলদের ব্যবসায় খাত থেকে আয় ৬ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগেও একই খাত থেকে নির্ভরশীলদের আয় ছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০ টাকা।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে ভূমিহীন ইকবাল হোসেন অপু কৃষিখাত থেকে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৩ টাকা আয় করতেন।

বর্তমানে তিনি ৩ কোটি ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক। পাঁচ বছর আগে ইকবাল হোসেন অপু ১ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক ছিলেন। পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৮৮ হাজার ২৭৩ টাকা।

বর্তমানে তার স্ত্রী ৭০ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪১ টাকার মালিক। পাঁচ বছর আগে ইকবাল হোসেন অপুর স্ত্রী ৫১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক ছিলেন। পাঁচ বছরে ইকবাল হোসেন অপুর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭২ টাকা।

বর্তমানে ৩ কোটি ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১৮ টাকার মালিক ইকবাল হোসেন অপু। এসব টাকার মধ্যে তার কাছে নগদ রয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১৮ লাখ ৪২ হাজার ২৯৮ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারে রয়েছে ৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে রয়েছে ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ৫২৪ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ২০ ভরি, যার অর্জনকালীন সময়কার মূল্য ৩ লাখ টাকা। ইকবাল হোসেন অপুর কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী বা আসবাবপত্র নেই। তার অন্যান্য খাতে রয়েছে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

পাঁচ বছর আগে ইকবাল হোসেন অপু ১ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক ছিলেন। এসব অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার কাছে তখন  নগদ ছিল ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৭ টাকা। বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে ছিল ৪৯ লাখ ৯ হাজার ৭৮৮ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার ছিল ২০ ভরি, যার অর্জনকালীন সময়কার মূল্য ৩ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতে ছিল ৩০ লাখ টাকা।

স্বামীর মতো ইকবাল হোসেন অপুর স্ত্রীরও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে বেড়েছে নগদ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রী ৭০ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪১ টাকার মালিক। এসব টাকার মধ্যে তার কাছে নগদ রয়েছে ১০ লাখ টাকা। মটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য) ৩০ লাখ টাকা ২৪ হাজার ৮৪১ টাকার, স্বর্ণালঙ্কার ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার রয়েছে তার। ইলেট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে ১ টি টেলিভিশন, ২ ফ্রিজ ও ২ টা এসি রয়েছে তার। যার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও অপুর স্ত্রীর রয়েছে ১ সেট করে সোফা, ডাইনিং টেবিল, ৩ টি খাট ও ২ টি আলমারি। যার মূল্য ২ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতে তার রয়েছে ১৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

পাঁচ বছর আগে ইকবাল হোসেন অপুর স্ত্রী ৫১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের মালিক ছিলেন। এসব অস্থাবর সম্পদের মধ্যে এসব টাকার মধ্যে তার কাছে নগদ ছিল ১ লাখ টাকা। ইকবাল হোসেন অপু সাংসদ হওয়ার আগেও তার স্ত্রী ৩০ লাখ টাকা ২৪ হাজার ৮৪১ টাকার মটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য), ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার। ইলেট্রনিক সামগ্রীর মধ্যে ১ টি টেলিভিশন, ২ ফ্রিজ ও ২ টা এসি ছিল তার। যার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও অপু সাংসদ হওয়ার আগে তার স্ত্রীর ছিল ১ সেট করে সোফা, ডাইনিং টেবিল, ৩ টি খাট ও ২ টি আলমারি। যার মূল্য ২ লাখ টাকা। অন্যান্য তার খাতে ছিল ৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনায় অপু তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৮ টাকা টাকা দেখালেও বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার স্ত্রীর কোনো টাকা নেই।

বর্তমানে ভূমিহীন ইকবাল হোসেন অপু। তার নামে কোনো কৃষি বা অকৃষি জমি নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় অপুর নিজ নামে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ কাঠা অকৃষি জমি স্থাবর সম্পত্তি ছিল। এছাড়া বর্তমানে তার একটি মৎস খামার রয়েছে। যে খামার থেকে তিনি বাৎসরিক ৪৫ লাখ টাকা আয় করেন। ৫ বছর আগেও এই খামারটি তার ছিল। তখনও তিনি খামারটি থেকে ৪৫ লাখ টাকা আয় করতেন।

ইকবাল হোসেন অপু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগেও তার স্ত্রী ৫ লাখ ৩ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ২ দশমিক ৫ কাঠা অকৃষি জমির মালিক ছিলেন। বর্তমানেও তার স্ত্রী ওই একই স্থাবর সম্পত্তির মালিক।

সাইফ রুদাদ/আরকে