কয়েক দফা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর থেকে মুন্সিগঞ্জে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন আলু চাষিরা। আলু জমিতে পানি জমার আশঙ্কায় জমির আইল কেটে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।  

মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বছর এ পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ফেলেছে কৃষক। বাকি জমি আবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানা গেছে, আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত। সেই আদর্শ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষক এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমিতে ইতোমধ্যে আলু রোপণ করে ফেলেছেন। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের সংবাদ শুনে অনেকে জমি তৈরি করার পরেও অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টিপাত হয় কিনা। সেই অপেক্ষায় আলু রোপণ করেননি। বৃহস্পতিবার ভোর রাত হতে মুন্সিগঞ্জে অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগের ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে অনেক কৃষকের জমিতে পানি জমে আলু বীজ নষ্ট হয় যায়। পরে আবার কৃষক যখন তাদের জমিগুলো পুনরায় চাষাবাদ করে আলু আবাদ করেছেন এবং করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সে সময় এই বৃষ্টি যেন কৃষকের মরার উপরে খাড়ার ঘাঁ। 

মুন্সিগঞ্জ সদর, টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার কৃষি জমি ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার হতে বন্ধ রয়েছে কৃষকের আলু আবাদের কাজ। যে কৃষি বিলগুলোতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছিল সেই বিলগুলো এখনো শ্রমিক শূন্য। কৃষক নিজেই কোদাল নিয়ে জমিতে জমিতে ঘুরছেন আইল কেটে পানি নামানোর নালা তৈরির জন্য। বুধবার সন্ধ্যার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউট শাহি এলাকার বিলে আলু জমির আইল কেটে নালা তৈরি করছিলেন শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জমি আলু রোপণের জন্য প্রস্তুত করেছি। এ পর্যন্ত ২১ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছি। বাকি জমিগুলোও প্রস্তুত করে রাখছি। এতোদিনে আলু রোপণ করে ফেলতাম। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ শুনছিলাম আবারও ঘুর্ণিঝড় হইবো তাই আলু রোপণ করিনাই। ঘূর্ণিঝড় না হলেও যেভাবে বৃষ্টি শুরু হইছে তাতে মনে হয় এ বছর আর বাকি জমিতে আলু রোপণ করতে পারমু না। যেটুকু লাগাইছি সেই জমিতে যাতে পানি না জমে তাই নালা কেটে দিচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, এ বছর সার, আলু বীজ, জমিজমা সবকিছুর দাম বেশি। যে জমিগুলোতে আলু রোপণ করি নাই সেগুলোতেও সার ছিটিয়ে রাখছি। এখন আলু লাগাইতে না পারলে আমার সব লস হইবো।  

সিরাজদিখান উপজেলার তেলির বিল গ্রামের কৃষক রহমান শেখ বলেন, আমি এবার ৫ কানি ( ৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু রোপণ করেছি। এখন যেভাবে বেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমার রোপণ করা বীজ আলু একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। আবারও আলু রোপণ করতে হবে। এতে আমার কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে।

গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রধান বলেন, এ বছর মিধিলির আগে আড়াইকানী জমিতে আলু রোপণ করেছিলাম। কিন্তু মিধিলির সময় বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে লাগাইছি। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় আবারও সব পচে যাবে।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, গতকাল বুধবার পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়ে গেছে। এ বছর মুন্সিগঞ্জের মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু। বাকি জমিগুলোতে আলু আবাদের প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, আলু চাষের উত্তম সময় নভেম্বর মাস। তবে এ বছর কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিথিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখোন আবার বৃষ্টিপাত হচ্ছে এতে আলু চাষ আরও বিলম্বিত হবে।

ব.ম শামীম/আরকে