নির্বাচনী হলফনামা
খুলনায় ধন-সম্পদে শীর্ষে মূর্শেদী, কম রশীদের
খুলনার ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে ধন-সম্পদে শীর্ষে রয়েছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মূর্শেদী। গত পাঁচ বছরে তার আয় ও সম্পদ দুটোই বেড়েছে। এরপরে সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। তার আয় বাড়লেও কমেছে সম্পদ। এরপরেই রয়েছেন খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেন, খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও খুলনা-১ আসনের প্রার্থী ননী গোপাল মন্ডল। আর সবচেয়ে কম সম্পদের মালিক খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল।
দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
ননী গোপাল মন্ডল
১০ বছর পর আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন খুলনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল। তিনি ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে নানা অভিযোগে ২০১৪ সালে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন।
তার হলফনামায় দেখা গেছে, পেশা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন ধান, তরমুজ ও মাছ উৎপাদন ও বিক্রিকে। তার বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। আয়ের পুরোটাই আসে কৃষি খাত থেকে।
ননী গোপালের সম্পদ রয়েছে ৪৯ লাখ ১৮ হাজার টাকার। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ ৩০ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। উপহার হিসেবে পাওয়া ১৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে পৈত্রিক সূত্রে ৪ দশমিক ১৮ একর কৃষি জমি ছাড়াও ছোট ছোট ভাগে আরও অনেক কৃষি জমি রয়েছে তার। এ ছাড়া ১০ কাঠা অকৃষি জমি, ৬৬ শতক জমিসহ একটি ভবন, ৩২ শতক জমির ওপর পৈত্রিক বাড়ি, সাড়ে ৩ একর আয়তনের একটি মৎস্য খামারের মালিক তিনি। তার স্ত্রীর নামে কৃষি জমি রয়েছে ৩ দশমিক ৩৪ একর।
সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল
গত ৫ বছরে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের আয় বাড়লেও কমেছে সম্পদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৭ কোটি ২৮ হাজার টাকা। এর আগে সেখ জুয়েলের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বর্তমানে তা কমে দাড়িয়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। গত ৫ বছরে তার স্ত্রীর আয়ও বেড়েছে। ২০১৮ সালে তার স্ত্রীর আয় ছিল ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বর্তমান আয় ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সেখ জুয়েল মেসার্স আজমীর নেভিগেশন এবং মেসার্স ফারদিন ফিসের মালিক। বার্ষিক আয়ের মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে তিনি ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, শেয়ার থেকে ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও ব্যাংক থেকে মুনাফা ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় করেন।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, সেখ জুয়েলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, এক কোটি টাকার এফডিআর, তিনটি কোম্পানির শেয়ার আছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং কার্গো ব্যবসায় তার বিনিয়োগ ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল নিউ টাউনে ১০ কাঠা জমি এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৭টি এবং খুলনার দিঘলিয়ায় দশমিক ৩৮ একর জমি রয়েছে এবং ঢাকায় ৩টি ফ্লাটের মালিক তিনি। ২০১৮ সালে তার ব্যাংক ঋণ ছিল ২৯ কোটি টাকা। বর্তমানে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে তার ঋণ রয়েছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
এসএম কামাল হোসেন
খুলনা-৩ আসনের নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন। তিনি মাস্টার্স পাশ। তার বিরুদ্ধে জরুরি বিধিমালায় একটি মামলা ছিল। সেটিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছিলো পুলিশ। তার পেশা ব্যবসা।
তার হলফনামার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কামাল হোসেনের বার্ষিক আয় ৪৭ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে বছরে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং এফডিআর ও ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ পান ১৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় বছরে (ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী) ৩০ লাখ ৫ হাজার টাকা।
কামাল হোসেনের সম্পদ রয়েছে মোট ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এর মধ্যে ২০ লাখ ১৭ হাজার নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ৩ কোটি ৪৫ লাখ স্থায়ী আমানত, ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, গৃহস্থালি দ্রব্য এবং ব্যবসার মূলধন ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮৪ ডেসিমেল কৃষি জমি, ৩ কাঠা অকৃষি জমি এবং ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দামের একটি দোকান রয়েছে। কামাল হোসেনের স্ত্রী শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। তার সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, ৩৫ লাখ ২৮ হাজার নগদ টাকা, ব্যাংক জমা ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। তার ছেলে-মেয়ের যৌথ নামে একটি ফ্ল্যাট ছাড়াও তাদের ৭৭ লাখ ৪২ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে।
আব্দৃস সালাম মূর্শেদী
আয় ও সম্পদ বেড়েছে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মূর্শেদীর। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে তার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে হলফনামায় দেওয়া হিসাব বিবরণীতে তার সম্পদ ছিল ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকার। গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। গত ৫ বছরে সালাম মূর্শেদীর আয়ও বেড়েছে। সংসদ সদস্য থাকাকালীন তার ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদও বেড়েছে।
হলফনামায় নিজেকে পাবলিক-প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পোশাক শিল্প, বস্ত্র শিল্প, ব্যাংক, হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করেছেন আব্দুস সালাম মূর্শেদী। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ২০১৮ সালে হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর আয় ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তার নিজের ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা ও স্ত্রীর ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং নির্ভরশীল (মেয়ে) সম্পদ ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৮ কোটি ২ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর আয় ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বর্তমানে তার ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার, স্ত্রীর ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এবং নির্ভরশীলের ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।
সালাম মূর্শেদীর সম্পদের মধ্যে রয়েছে তার হাতে নগদ ২৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৯৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার। গাড়ি, গৃহসম্পত্তি ছাড়াও অন্যান্য অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের ভবন। ব্যাংকে তার ঋণ রয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর কাছে ১ কোটি ৮৬ লাখ নগদ টাকা, ব্যাংকে ১৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। অন্যান্য সম্পদ রয়েছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের।
আরও পড়ুন
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ
সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবারও খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার আয় কমলেও বেড়েছে সম্পদ। তবে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার সম্পদের বিপরীতে তার ব্যাংক ঋণ রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আরও ১৫ লাখ টাকা ধার করেছেন।
হলফনামায় কৃষি ও ইট ভাটার ব্যবসাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এম এ পাশ। তার বিরুদ্ধে পূর্বে একটি মামলা ছিল। ২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় কমে দাড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতিবছর কৃষিখাত থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ইট ভাটার ব্যবসা থেকে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে ৬ লাখ ৬০ হাজার আয় করেন তিনি।
২০১৮ সালে তার সম্পদ ছিল ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকার। ৫ বছরে সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকায়। সম্পদের মধ্যে তার কাছে নগদ ৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৫৫ লাখ টাকা, ৪ দশমিক ১৭ একর কৃষি জমি, কিছু অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি সেমিপাকা ভবন রয়েছে। ব্যাংকে তার ঋণ ১ কোটি ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
মো. রশীদুজ্জামান
প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম সম্পদ খুলনা-৬ আসনের মো. রশীদুজ্জামান মোড়লের। খুলনা-৬ আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি নির্বাচনী মাঠে নেমেছেনে।
তার হলফনামা বলছে, রশীদুজ্জামান মোড়ল এমএ পাশ। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুটি মামলা ছিল। দুটিতেই তিনি খালাস পেয়েছেন। কৃষি ও ব্যবসাকে আয় হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে বছরে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে আয় করেন ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। তার স্ত্রী শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। তার স্ত্রীর শিক্ষকতা পেশা থেকে বার্ষিক আয় করেন ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
রশীদুজ্জামানের সম্পদ রয়েছে ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার। তার সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা মাত্র ৫০০ টাকা, দশমিক ৬৬ একর কৃষি জমি, দশমিক ২৪ একর অকৃষি জমি, একটি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। আছে দুইটি মোটরসাইকেল, এক ভরি স্বর্ণ ও আসবাবপত্র। তার স্ত্রীর রয়েছে ৩ দশমিক ০৬ একর কৃষি জমি এবং দশমিক ২২ একর অকৃষি জমি।
এএএ