দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একাদশ সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। একাধিকবার সংসদ সদস্য ও প্রথমবারের মতো প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

১০ বছর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী মোনালিসা হোসেনের মূলধন ছিল নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিতসহ ২৫ লাখ টাকা। তাদের বিবাহসূত্রে উপহার বাবদ ছিল ৬৫ ভরি সোনা। ২০২৩ সালে সেই মূলধন বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ও ১৫৫ ভরি স্বর্ণ । ওই সময় কোনো কৃষি জমি ও ফ্ল্যাট না থাকলেও এখন কৃষি থেকে তার বাৎসরিক আয় ২৫ লাখ টাকার বেশি। কিনেছেন ঢাকার উত্তরাতে একটি ফ্ল্যাটও।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১০ বছরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সম্পদের একটি বড় উৎস কৃষি। এ খাত থেকে বছরে ২৫ লাখ টাকার বেশি আয় করেন তিনি। এছাড়া অন্যান্য খাতেও তার আয় বেড়েছে। হলফনামায় তিনি লিখেছেন, কৃষি থেকে তার বছরে আয় ২৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৪ টাকা, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ২০১ টাকা এবং পারিশ্রমিক, ভাতা, সম্মানী হিসেবে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ টাকা আয় করেন। এ হিসাবে তার আয়ের বড় অংশটি আসে পারিশ্রমিক, ভাতা ও সম্মানী থেকে।

তার নগদ রয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৬ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ৬ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে সংসদ নির্বাচনের সময় নগদ ছিল ৯ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা ছিল ১১ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৮ টাকা।

এছাড়া বর্তমানে তার ব্যাংকে আছে ২৯ লাখ ১ হাজার ৯১৫ টাকা এবং পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৪০ লাখ টাকা, যার অর্ধেক তার স্ত্রীর নামে। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করছেন তার দাম ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে একটি মাইক্রোবাস রয়েছে, যার দাম ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার স্ত্রী মোনালিসার নগদ টাকা রয়েছে ৪৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে দেড় লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ২০ লাখ টাকার, ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

ফরহাদ হোসেনের নিজের ২৫ ভরি ও স্ত্রীর ১৩০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি বেশ কিছু জমিজমার তথ্য হলফনামায় দিয়েছেন। তার কৃষিজমি রয়েছে ২৭৪ শতক। রাজধানীর উত্তরায় ১ হাজার ৬০০ স্কয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাট তার নামে রয়েছে, তবে তা বুঝে পাননি। এছাড়া একটি দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে।

মেহেরপুর জেলা নির্বাচন অফিস থেকে পাওয়া হলফনামা ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরহাদ হোসেন যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, তাতে নগদ ও ব্যাংকে জমা ছিল ২০ লাখ টাকা। তখন তিনি কোনো গাড়ির মালিক ছিলেন না, ছিল না কোনো কৃষিজমি, ব্যবসা এমনকি কোনো ফ্ল্যাটও।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় দেড় কোটিরও কম টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া যায়। ওই সময় তার কাছে নগদ ছিল ৬ লাখ টাকা। এছাড়া তখন তার ছিল ৮০ লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ছিল ২০ লাখ টাকার, আসবাব ছিল ৫ লাখ টাকার এবং ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পদ ছিল ৩০ লাখ টাকার। ওই বছর তার সঞ্চয়পত্র ছিল ১ লাখ ৫  হাজার ৩৫৩ টাকার। কৃষি থেকে আয় ছিল ৪ লাখ ও অন্যান্য খাত থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

আকতারুজ্জামান/এসএসএইচ