গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ। গত ৫ বছরে বাদশাহর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ গুণ আর তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০৬ গুণ। তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ২৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ৬৯ লাখ এক হাজার ৭৫৪ টাকা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসনে ৪৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ২৯ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। চারটি আসনে মোট ৪৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা বাদশাহর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ ঘোষণা করেছেন।

গত ৫ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বাদশাহ ও তার স্ত্রী। হলফনামার তথ্য সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ'র বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ টাকা। 

আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য মতে, তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ২৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ৬৯ লাখ এক হাজার ৭৫৪ টাকা। আর বর্তমান স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৭ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭২৮ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরওয়ার জাহান বাদশাহর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার। আর বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১০৬ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ১৩৯ টাকা। বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে কৃষি জমি, মাছ ও গরুর খামার। 

আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বর্তমান সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ১৯৬০ সালের ১৮ মার্চ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বাবা হাজী মুহাম্মদ শাহজাহান ছিলেন ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং মা ফিরোজা বেগম ছিলেন গৃহিনী।

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ১৯৮০ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কুষ্টিয়া জেলায় প্রথম গ্রেপ্তার হন। তিনি কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা এবং আওয়ামী যুবলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক। তিনি কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আহ্বায়ক। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পেশা জীবনে তিনি একজন স্বনামধন্য আইনজীবী। আওয়ামী আইনজীবী কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আরকে