আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। 

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে পৃথক নোটিশে তাদের শোকজ করেন নওগাঁ-২ আসনের জন্য গঠিত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ মো. আহসান হাবিব। 

নোটিশে আগামী রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ ও দুপুর ১টার দিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীকে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের (পত্নীতলা) অস্থায়ী কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁ-২ আসন থেকে ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। বর্তমানে ২০০৮ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন তিনি। এবার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে আবারও মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন শহীদুজ্জামান সরকার। এতে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন হওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়।

শহীদুজ্জামান সরকারকে দেওয়া কারণ দর্শানোর ওই নোটিশে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবারসহ বিভিন্ন সময়ে তার সমর্থকরা শহীদুজ্জামানের উপস্থিতিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন। এছাড়াও সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে শহীদুজ্জামানের পক্ষে এবং তার নেতৃত্বে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশের কারণে জনগণের চলাচলে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। যা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর ৬ (ঘ) ও ১২ নং বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন আমার গাড়ির পেছনে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটেছে। ওইদিন এতো লোকজন পিছু নেবে তা আমিও ভাবিনি। মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ের দিনেও তারা একই কাজ করেছে। কিছু অতি উৎসাহী লোক থাকে, যারা নিজেদের দেখানোর জন্য এসব কাজ করে থাকে। বাস্তবতায় এদের নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় নেই। তাদের ভুলের মাশুল সমসময় আমাদের দিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধিরা কোথাও দাঁড়ালে লোকজনের ভিড় জমে যায়। দেখলে মনে হয় ‘আমরা সমাবেশ করছি’। এখন এটাই আমাদের জন্য সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের যেসব ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিচ্ছে, তা সংশোধনের চেষ্টা করব। শোকজের নোটিশ পেলে অবশ্যই নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করব।

অপরদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এবার জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন। তাকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, রোববার (৩ ডিসেম্বর) থেকে বিভিন্ন সময়ে তোফাজ্জল হোসেন এবং তার সমর্থকরা ধামইরহাট ও পত্নীতলা উপজেলায় ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও রঙিন পোস্টার লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচার অভিযান শুরু করেন। এছাড়াও তোফাজ্জল হোসেন ‘জাতীয় পার্টিতে যোগ দিন’, ‘লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিন’ এই জাতীয় বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে দলীয় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর ৬ (ঘ) ও ১২ নং বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে মেসেজ পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

আরমান হোসেন রুমন/আরএআর