আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, জাহিদ ফারুক শামীম ও গোলাম কিবরিয়া টিপু (বাম থেকে)

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ৬টি আসনে মোট ৪৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন রয়েছেন বর্তমান ও সদ্য সাবেক জনপ্রতিনিধি। এর মধ্যে ৫ জন সংসদ সদস্য (এমপি) ও একজন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। 

৬ প্রার্থী হলেন- বরিশাল ১ আসনের (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আওয়ামী লীগ মনোনীত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল ৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথ, বরিশাল-৫ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসরিন জাহান রত্না এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া এই ছয়জনের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিগত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছেন পাঁচজন। তবে বরিশাল ৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী নাসরিন জাহান রতনার আয় কমেছে। প্রাথমিক হিসেবে দেখা গেছে, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও জাহিদ ফারুক শামীমের পাঁচ বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে কোটি টাকার বেশি। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বেড়েছে নগদ টাকা। গোলাম কিবরিয়া টিপুর বেড়েছে দ্বিগুণ আয়। পঙ্কজ নাথের আয় বাড়লেও তা কোটির ঘর অতিক্রম করতে পারেনি।  

আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ

বারবার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে। তার বাবা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতও ছিলেন মন্ত্রী। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন- তার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৭৪ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে এসে নগদ অর্থ উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০৯ টাকা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ হলফনামায় উল্লেখ করেন- তার বাৎসরিক আয় ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া বাবদ আয় ৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৯৬ টাকা, ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ২ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫ টাকা।  নগদ অর্থ  রয়েছে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৭৪ টাকা, ব্যাংকে জমা ২ কোটি ৭৯ লাখ ২২ হাজার ৫৮৯ টাকা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একটি প্রাইভেট কার ও একটি জিপ রয়েছে, যার মূল্য ৭৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৯ টাকা। ১০০ ভরি স্বর্ণ, ২ লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক ও আসবাবপত্র, কৃষি জমি ২০ একর, অকৃষি জমি ৪০ একর এবং ১ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৫ টাকা মূল্যের একটি দালান রয়েছে নিজ নামে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৪ টাকা, ব্যাংকে জমা ১ কোটি ২ লাখ টাকা, শেয়ার ৮ লাখ টাকা, ১৮ লাখ টাকার একটি কার, স্বর্ণ ৬০ তোলা, ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও অকৃষি জমি রয়েছে ৫২ ডেসিমাইল।

২০২৩ সালের হলফনামায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন- তার বাৎসরিক আয় ৪ কোটি ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টাকা। যা ২০১৮ সালের হলফনামায় প্রদর্শিত আয়ের চেয়ে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৪ টাকা বেশি। এবার উল্লেখ করেছেন কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৩ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৮৯৮ টাকা, চাকরি থেকে আয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০৯ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯ টাকা, শেয়ার রয়েছে ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকার দুটি জিপ, ৫০ ভরি স্বর্ণ, আসবাবপত্র ২ লাখ টাকার, কৃষি জমি ১৭ একর, অকৃষি জমি ৪১ একর, ঢাকার কলাবাগানে একটি দালান রয়েছে, যার মূল্য ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ টাকা। তার জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ

আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বড় ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ ২০১৮-২৩ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইলেও দল থেকে না দেওয়ায় তিনি ছিটকে পড়েন। তবে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাদিক।

২০১৮ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে- সাদিক আব্দুল্লাহর কাছে ছিল নগদ ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। সে সময় বাড়িভাড়া থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪০০ টাকা, চাকরি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও সঞ্চয়পত্র ২ লাখ টাকার। সে সময় বস্তুগত সম্পত্তি হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন একটি রিকন্ডিশন মাইক্রোবাস, খাট, আলমারি, সোফা ও ডাইনিং টেবিল, পূর্বাচলে রাজউকের আবাসিক প্লট এবং গুলশানের নিকেতনে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট।

কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে সম্পদ বেড়েছে অনেক। ২০২৩ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সাদিক আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, তিনি মৎস্য চাষী ও রাখি মালের ব্যবসায়ী। তার কাছে নগদ রয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে আয় হয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নিজ পেশা থেকে আয় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মেয়র সম্মানী ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। শেয়ার ও ডিবেঞ্জার ২ লাখ টাকা। ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অকৃষি জমি ও গুলশানের নিকেতনে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট, যার মূল্য ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে সাদিকের স্ত্রী লিপি আব্দুল্লাহর নামে কোনো সম্পদ না থাকলেও ৫ বছরের ব্যবধানে স্ত্রীর নামে সম্পদ হয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণ এবং ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৬৫ শতাংশ অকৃষি জমি।

জাহিদ ফারুক শামীম

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তিনি। ২০১৮ সালে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় পেশা ব্যবসা উল্লেখ করা জাহিদ ফারুকের বাৎসরিক আয় ছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮০২ টাকা। তার নগদ ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৫ টাকা, গাড়ির মূল্য ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫০ টাকা, স্বর্ণ ২০ ভরি, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র ৪ লাখ টাকা, অকৃষি জমি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিল। স্ত্রীর নামে ছিল আরও ৩০ ভরি স্বর্ণ। এ ছাড়া ওই সময় তার গাড়ি ক্রয় বাবদ প্রায় ৭ লাখ টাকার ঋণও ছিল।

৫ বছরের ব্যবধানে চলতি নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় জাহিদ ফারুক তার বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৮ টাকা।

এর মধ্যে পেনশন ও সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া ভাতা থেকে বাৎসরিক আয় ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৬ টাকা। ব্যাংক মুনাফা ও ফ্ল্যাট বিক্রি করে আয় ১ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাৎসরিক আয় বেড়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮ হাজার ৮৫৬ টাকা। এছাড়া তার নগদ অর্থ রয়েছে ৫৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৩ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কার, স্বর্ণ ২০ তোলা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও আসবাবপত্র ৭০ হাজার টাকার। বরিশালের আলেকান্দায় দুটি বাড়ি এবং কক্সবাজার ও ঢাকার বারিধারায় দুটি দালান রয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা। জাহিদ ফারুখের স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ রয়েছে ৯২ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ ৫৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৭০ লাখ টাকা, ১০ তোলা স্বর্ণ এবং একটি পিস্তল রয়েছে যার মূল্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

গোলাম কিবরিয়া টিপু

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে টিপু বার্ষিক আয় দেখান ৬ কোটি ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৪ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ৬ কোটি ৮৪ হাজার ৪৬৪ টাকা এবং করমুক্ত মৎস্য ব্যবসা থেকে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া তার ছিল নগদ ৪ লাখ ৪ হাজার ৬৬৮ টাকা, ব্যাংকে জমা ২ কোটি ৩০ লাখ ৮ হাজার ১০৮ টাকা। সুদবিহীন বিনিয়োগ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯১ টাকা। ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮৬ টাকা মূল্যের চারটি গাড়ি রয়েছে তার।

২০২৩ সালে এসে গোলাম কিবরিয়া টিপুর বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ৩ হাজার ৭৯২ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ১২ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ৩২৮ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে বছরে ৩ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৬ টাকা আয়, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে ১৪ কোটি ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭১ টাকা আয়। বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বছরে আয় ৩ কোটি ৩০ লাখ ৯ হাজার টাকা। এছাড়া সম্মানী ভাতা পান ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ ও অন্যান্য খাত থেকে ৫৯ লাখ ২১ হাজার ৬৯০ টাকা এবং পার্লামেন্ট থেকে প্রাপ্ত আয় ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৫ টাকা। তার নগদ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৫ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৬ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯২ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৫ টাকা। বন্ড ও সঞ্চয়পত্রে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৬ টাকা রয়েছে। স্থায়ী আমানত রয়েছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৬৪৬ টাকা। ২টি জিপ গাড়ি, বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি রয়েছে ৯১ লাখ টাকার। নিজের ১৫০ ভরি স্বর্ণও রয়েছে। এছাড়া একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল রয়েছে তার।

পঙ্কজ নাথ

ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। নির্বাচিত হওয়ার পরে মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা উপজেলায় একক আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। তবে ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তিনি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ।

২০১৮ সালে পঙ্কজ নাথ হলফনামায় উল্লেখ করেন-  তার প্রধান আয়ের উৎস ব্যবসা। তার বার্ষিক আয় ছিল ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ১২৩ টাকা। ওই বছর তিনি উল্লেখ করেন ব্যবসা থেকে তার আয় হয় ৩৬ হাজার টাকা। সংসদ সদস্যর সম্মানী ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ টাকা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে পারিতোষিক ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ থেকে ২০ লাখ ৭৪ হাজার ৪২৩ টাকা। নগদ টাকা ছিল ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৯ টাকা। ব্যাংক ব্যালেন্স ২৭ লাখ ৫১ হাজার ৪৯৯ টাকা। বন্ড, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার ছিল ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ডিপিএস ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার। যানবাহনে ৬৩ লাখ ১১ হাজার ৮১৫ টাকা। স্বর্ণ ৬০ তোলা। বিয়ের উপহার হিসেবে আসবাব পেয়েছেন ৭০ হাজার টাকার। স্ত্রীকে ঋণ প্রদান ও ব্যক্তি মালিকানার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার ৬১৪ টাকা। পূর্বাচলে প্লটের মূল্য ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং একটি ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকার ফ্লাট রয়েছে।

কিন্তু পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে এসে পঙ্কজ নাথের বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৮৫০ টাকা। যা ২০১৮ সালের চেয়ে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৭ টাকা বেশি। এ বছর তিনি দেখিয়েছেন ব্যবসা থেকে আয় ১৯ লাখ ৫০ হাজার এবং সম্মানী ভাতা ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৫০ টাকা। তার নগদ ৬ লাখ ৬২৬ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৩ টাকা। স্থায়ী আমানত রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার ৭৭ টাকা। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, মালগাড়ি রয়েছে ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৮১৫ টাকার। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার। নিজের ৬৭ ভরি স্বর্ণও রয়েছে।

নাসরিন জাহান রতনা

বরিশাল-৬ আসন বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে নাসরিন জাহান রতনা জাতীয় পার্টি থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫০ টাকা, সংসদ সদস্যের সম্মানী ভাতা ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫শ টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে ৪১ হাজার ৪ শ ৪৬ টাকা আয় হয়।

২০২৩ সাথে উত্থাপিত হলফনামায় তার আয় কমেছে প্রায় ২৫ লাখ ২০ হাজার ১৭ টাকা। এবার তিনি বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। তার পেশা ব্যবসা হলেও তিনি এক টাকাও ব্যবসা খাত থেকে আয় করেন না। তবে শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে ৫৫ হাজার ৩৭ টাকা আয়। বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ বছরে আয় ৬ লাখ ২৮ হাজার ৪২ টাকা। এছাড়া সম্মানী ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয়। ব্যাংক সুদ ও অন্যান্য খাত থেকে ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা আয় করেন।

এছাড়া তার অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে নগদ ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৪ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮১ টাকা, বন্ড ও সঞ্চয়পত্রে ১ কোটি ৫০ লাখ ১৫ হাজার টাকা, স্থায়ী আমানত রয়েছে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩১ টাকা। দুটি জিপ গাড়ি, বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩০ টাকা, নিজের নামে ১০০ তোলা স্বর্ণও রয়েছে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে ৯ লাখ টাকা। এছাড়া ১০ লাখ টাকা মূল্যের দালান, ৭৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪২ টাকার অকৃষি জমি আছে তার।

জেলা রিটার্নিং অফিসার শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৬ আসনে মোট ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে বাছাইয়ে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়ন হারান। বাকি ৪৫ জন রয়েছেন। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি। ৭ জানুয়ারি একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভোট উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর