শোধ করেছেন মায়ের ঋণ, সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণ
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর তার ছেলে নাহিম রাজ্জাক শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ) আসন থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আসনটি থেকে আবারও লড়বেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী মায়ের কাছে তার ঋণ থাকলেও এবারের হলফনামায় সেই ঋণ নেই। এছাড়া তার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তি হয়েছে দ্বিগুণ। তবে কমেছে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী নাহিম রাজ্জাক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা পাস। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর আয়ের উৎস অটোমোবাইলস, এস্টেট ডেভলপমেন্ট ও হোল্ডিংস কোম্পানি।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে তার ব্যবসা ও চাকরি থেকে বাৎসরিক আয় ৬২ লাখ ২৬ হাজার ১৬ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি পেশা ব্যবসায়ী উল্লেখ করলেও ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় ছিল না। সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া বেতন ও ব্যাংক সুদ বাবদ পাওয়া অর্থ থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬২ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৫ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫১ টাকা।
বর্তমানে নাহিম রাজ্জাক ও তার স্ত্রীর বার্ষিক মোট আয় ৯২ লাখ ৮২ হাজার ১৯১ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তাদের বার্ষিক মোট আয় ছিল ২৮ লাখ ২০ হাজার ৫১৩ টাকা।
নাহিম রাজ্জাকের বর্তমান বার্ষিক আয়ের ৬২ লাখ ২৬ হাজার ১৬ টাকার মধ্যে তিনি তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮০ টাকা, চাকরি থেকে ৩০ লাখ ১০ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ২১ হাজার ৭৩৬ টাকা আয় করেন। নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রীর বাৎসরিক আয়ের ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৫ টাকার মধ্যে তারা বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে ১২ লাখ ৬০ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয় ও ব্যাংক আমানত বাবদ ১২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৫ টাকা ও চাকরি থেকে সম্মানী ভাতা ৫ লাখ টাকা আয় করেন। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫১ টাকা। এসব টাকার মধ্যে তার স্ত্রী ব্যবসা খাত থেকে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৪৯ হাজার ৮৫১ টাকা আয় করতেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাহিম রাজ্জাকের বার্ষিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬২ টাকা। এর মধ্যে তিনি সংসদ সদস্যদের সম্মানী বাবদ ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭৫ টাকা, ব্যাংকের সুদ বাবদ ৪৩ হাজার ২৮৭ টাকা আয় করতেন। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫১ টাকা। এসব টাকার মধ্যে তারা ব্যবসা খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ও ব্যাংক সুদ থেকে ৪৯ হাজার ৮৫১ টাকা আয় করতেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী নাহিম রাজ্জাকের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। বর্তমানে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭১ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৫ টাকা।
পাঁচ বছরে নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ কমেছে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭২৮ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৫ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৩ টাকা।
বর্তমানে নাহিম রাজ্জাকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭১ টাকার মধ্যে তার কাছে নগদ রয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার ৩৪৭ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৪২ লাখ ৬ হাজার ১২৪ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার রয়েছে ৭১ লাখ ৮৩ হাজার টাকার। মোটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য) ৯৫ লাখ টাকার। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ১ লাখ ১০০ টাকার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নাহিম রাজ্জাকের অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৫ টাকা। এসব টাকার মধ্যে ছিল ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৭ টাকা নগদ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৩৮ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারবাজারে ছিল ১৮ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা, মোটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য) ছিল ৬৫ লাখ টাকার। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ১ লাখ ১০০ টাকার। ব্যবসায় পুঁজি ও আত্মীয়স্বজনদের লোন প্রদান বাবদ ছিল ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
বর্তমানে নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি ৪৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৫ টাকা। এর মধ্যে নগদ রয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ ২৬ হাজার ৬১ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার বাজারে ৪৫ লাখ ২৮ হাজার ৯০ টাকা, মোটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য) ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। স্বর্ণালঙ্কার (অর্জনকালীন মূল্য) ১২ লাগ ৬০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। অন্যান্য খাতে তার স্ত্রীর রয়েছে ১৪ লাখ ২৩ হাজার ২২৮ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে রয়েছে ৮২ লাখ ৫৩ হাজার ৯৫৯ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৩ টাকা। এসব টাকার মধ্যে নগদ ছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার ২০৮ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৩ টাকা এবং বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার বাজারে ছিল ৩৭ হাজার ৪৯৯ টাকা। মোটরগাড়ি (অর্জনকালীন মূল্য) ছিল ২৩ ৮৫ হাজার টাকার। স্বর্ণালঙ্কার (অর্জনকালীন মূল্য) ছিল ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এ ছাড়া তার স্ত্রীর অন্যান্য খাতে ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৩ টাকা।
শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ২ হাজার ৩২৫ টাকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে নাহিম রাজ্জাকের নিজ নামে কৃষি, অকৃষি ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৮২৫ টাকার। এর মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ ৮২ হাজার ৮২৫ টাকা মূল্যের কৃষি জমি, ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে। অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৩০ লাখ টাকার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নাহিম রাজ্জাকের নামে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৫০০ অকৃষি জমি ও প্লট ছিল। এর মধ্যে ৬৯ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ও পূর্বাচলে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্লট ছিল।
বর্তমানে নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রী দুটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক, যা তিনি ওয়ারিশসূত্রে পেয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাহিম রাজ্জাকের স্ত্রী কোনো স্থাবর সম্পদের মালিক ছিলেন না।
বর্তমানে মধুমতি ব্যাংকে একটি গাড়ির বিপরীতে নাহিম রাজ্জাকের ১১ লাখ ২২ হাজার ৫২৫ টাকা ঋণ রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী মায়ের কাছে তার ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ থাকলেও এবারের হলফনামায় তিনি তার পরিশোধ দেখিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার মধুমতি ব্যাংকের কাছে গাড়ি বাবদ ঋণ ছিল ১০ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৯ টাকা। মায়ের ঋণ পরিশোধ করে বর্তমানে তিনি মধুমতি ব্যাংকের কাছে তার ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার ৫২৭ টাকা।
এমজেইউ