দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী দুজনই বেশ অর্থসম্পদশালী। বর্তমানে স্ত্রীর চেয়ে তার কাছে স্বর্ণের পরিমাণ বেশি রয়েছে। তাদের নেই কোনো ঋণ। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে রয়েছে।

সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেশি। এছাড়াও তার নিজ নামে ৯৫ ভরি স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর নামে স্বর্ণ আছে ৫০ ভরি।মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৪৭১ টাকা বিপরীতে তার সম্পদ ৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ২৯৯ টাকা। তবে তার নেই কোনো দায়-দেনা।

হলফনামায় মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৩ টাকা। কৃষিখাতে আয় বছরে ১৬ হাজার টাকা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও অন্য খাত থেকে সম্মানি হিসেবে আয় ২৭ লাখ ৬ হাজার ২৬৩ টাকা।

অন্যদিকে সংসদ সদস্যের স্ত্রীর বর্তমানে শেয়ার সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬২৫ টাকা। এছাড়া অন্য খাতে সম্মানি হিসেবে আয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে দুটি গাড়িতে চড়ছেন মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। হলফনামায় যেগুলোর দাম উল্লেখ করেছেন ৯৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

একই সময়ে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হাতে নগদ ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ৪ হাজার ৭১১ ইউএস ডলার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার ১০২ টাকা, বিভিন্ন কোম্পানির ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। 

মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষি জমি ২১৮ দশমিক ৫ শতক ও অকৃষি জমি ২০৫ দশমিক ৪৩ শতক। রাজধানীর বারিধারায় রয়েছে দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি। এছাড়া ফেনীর সোনাগাজীর সুলাখালীতে রয়েছে একটি বাড়ি। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩০ শতক কৃষি জমি।

বর্তমানে সংসদ সদস্য মাসুদ চৌধুরীর রয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ৬ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। অন্যান্য (আর্মস, ক্লাব জামানত, ইউটিলিটি জামানত, লোন প্রদান) বাবদ ৫২ লাখ ২ হাজার ৫২৫ টাকা।
  
বিপরীতে তার স্ত্রীর নামে হাতে নগদ রয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৪’শ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭১ টাকা, বিভিন্ন কোম্পানির ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ইলেক্ট্রনিক্স ও আসবাবপত্র এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। সাংসদ স্বামীর পাশাপাশি  তারও রয়েছে একটি গাড়ি।
 
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বেয়াই। তিনি খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা।

২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের জিওসির দায়িত্বে থাকা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এক-এগারোর পরিবর্তনের পর গুরুতর অপরাধ দমনসংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন। ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের সময় বেশ আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ছিলেন লে. জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।

তারেক চৌধুরী/আরকে