শিশু শিক্ষার্থী দিব্যেন্দু ঈশাণের কয়েকদিন ধরেই মন ভালো নেই। ঘরের কারো সঙ্গে খুব একটা কথাও বলছে না। তার বন্ধুরা সরকারি বিদ্যালয়ে চান্স পেলেও বরিশালের পাঁচটি সরকারি বিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে পছন্দের তালিকা দিয়েও একটিতেও তার নাম আসেনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার মা-বাবা।

এই ছোট শিশুটি কোথাও সুযোগ না পেলেও লটারির ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থী একাধিক বিদ্যালয়ে চান্স পেয়ছে। অভিভাবকরা একাধিক ইউজার আইডি খুলে একাধিক আবেদন করায় তিন-চারটি বিদ্যারলয়ে এক সঙ্গে চান্স পেয়েছে অনেকে।

যেমন, মনজিতা দাস নামে এক শিক্ষার্থী তার জন্মনিবন্ধনের অনুকূলে তিনটি আইডি খুলে তিনটি আবেদন করেছে। লটারিতে সে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সৈয়দ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে।

আরেক শিক্ষার্থী তাছনিমের জন্মনিবন্ধনের অনুকূলে তিনটি ইউজার আইডি ব্যবহার করে তিনটি আবেদন করে। সে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। রোদেলা নামের আরেক শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে সাতটি আইডি দিয়ে আবেদন করে। লটারিতে ওই শিক্ষার্থী বরিশাল সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সুযোগ পেয়েছে।

শুধু লটারিতে নাম না ওঠা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অভিযোগ নয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরেও এসেছে এই চিত্র। তাদের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ২০১৬৭৯১১৪৮৩১০৩০৯১ নম্বরের জন্মনিবন্ধনের অনকূলে ৪টি ইউজার আইডি। আবেদনকারী তিনটি স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। ২০১৫৩৫১৩২৯০০৩০৪৩০ নম্বরের জন্মনিবন্ধনের অনুকূলেও ৪টি ইউজার আইডি। সেও তিনটি স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। এছাড়া ২০১৫০৯১১৮৬৫১১০২৫৬ নম্বরের জন্মনিবন্ধনের অনুকূলে ৭টি ইউজার আইডি পাওয়া গেছে। সেও তিনটি স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে।

শুধু এই তিনজন নয় বরিশোলে কমপক্ষে ১৫ জন শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের জালিয়াতিতে তিনটি বিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।

দিব্যেবন্দু ইশানের পিতা দেবাশীষ কুন্ডু বলেন, এক শিক্ষার্থী এভাবে ৪ থেকে ৭টি পর্যন্ত আইডি খুলে আবেদন করা আমি মনে করি জালিয়াতি। এমন অসাধু অভিভাবকদের কারণে আমার সন্তানের মতো অনেক শিশুদের মেধা থাকলেও জালিয়াতির সামনে সরকারি স্কুলে ভর্তির চান্স পায় না। এদের জালিয়াতির কারণে শত শত শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আরেক অভিভাবক রেবেকা সুলনতানা বলেন, আমার সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের অনুকূলে একটি ইউজার আইডি খুলে আবেদন করেছি। আমার সন্তান কোথাও চান্স পায়নি। অথচ জালিয়াতি করে পুরো সিস্টেমকে ধোকা দিয়ে অনেকের সন্তান ৩/৪ টি স্কুলে এক সঙ্গে চান্স পেয়েছে। এই অনিয়ম না রুখলে শিক্ষার অধিকার সবার জন্য নিশ্চিত হবে না। এতে জালিয়াতি করা অভিভাবকদের যেমন দায় আছে তেমনি অনলাইন সিস্টেমেরও দায় আছে। একই জন্মনিবন্ধনে একাধিক আবেদন হলেও কি কারনে অনলাইনে তা ধরা পড়ছে না সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।

পটুযাখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, টেলিটকের ওয়েব সিস্টেম দুর্বল মনে হয়েছে। যারা এর ডিজাইন করেছে তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। ভর্তির আবেদন বিশ্লেষণ না করায় অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছে। প্রোগ্রামাররা অভিজ্ঞ হলে সহজেই ডাটা ডুপ্লিকেসি বন্ধ করতে পারত। ডাটা ডুপ্লিকেসি বন্ধ না করায় একই ডাটা দিয়ে একাধিক আবেদন করেছে। পরবর্তীতে আরও সতর্ক হয়ে সঠিক প্রগ্রামিং করবে বলে আশা করছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ বেলাল হোসাইন জানিয়েছেন, একাধিক ইউজার আইডি তৈরি করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে এক শিক্ষার্থী একাধিক স্কুলে সুযোগ পেলেও তাদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। বরং আমরা টেলিটক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি যেন তারা একাধিক আবেদনকারীকে শনাক্ত করে আইডিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, বরিশালের ৫টি সরকারি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তির লটারির ফলাফল প্রকাশ ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। ফলাফলে অনেকেই হতাশ হলেও অনেকে জালিয়াতির মাধ্যমে সন্তানদের একাধিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে