রংপুরে ২৭৮ প্রার্থীর মধ্যে অবৈধ ৬৯
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে রংপুর বিভাগের আট জেলার ২০৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে বাতিল করা হয়েছে ৬৯ জনের মনোনয়ন। বিভাগের ৩৩টি আসনে মোট মনোনয়ন দাখিল হয় ২৭৮টি। সোমাবার (৪ ডিসেম্বর) মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তারা বৈধ ও অবৈধ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা দেন।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলার ৩৩টি সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ২৭৮ জন মনোনয়ন ফরম দাখিল করেন। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। শেষ দিনে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে ৬৯ জন প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে বৈধ হয়েছেন ২০৯ জন।
বিজ্ঞাপন
সূত্র বলছে, বেশিরভাগ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন। রংপুর জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এর মধ্যে ৩৯ জনের মনোনয়ন বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন। রংপুর-১ আসনে ১২ প্রার্থীর মধ্যে একজনের, রংপুর-২ আসনে ৬ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের, রংপুর-৩ আসনে ৯ জনের মধ্যে একজনের, রংপুর-৫ আসনে ৯ জনের মধ্যে একজনের এবং রংপুর-৬ আসনে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা হয়।
রংপুর
রংপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৪৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এর মধ্যে ৩৯ জনের মনোনয়ন বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে- রংপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন, রংপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার, সুমনা আক্তার ও বিএনএফ মনোনীত জিল্লুর রহমানের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে। রংপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাকিবুল বাশার, রংপুর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার এবং রংপুর-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুল আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী।
দিনাজপুর
দিনাজপুর জেলার ছয়টি আসনে ৩৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৩০ জনকে বৈধ এবং ৪ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে- দিনাজপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হুসাইন বিপু, দিনাজপুর-৩ আসনে রাসেদ পারভেজ, দিনাজপুর-৫ আসনে ব্রিগেডিয়ার (অবরপ্রাপ্ত) তোজাম্মেল হোসেন ও দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত ফিরোজ সুলতান আলম।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম জেলার চারটি সংসদীয় আসনে ৩৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে ২৫ জন বৈধ হয়েছেন। অবৈধ হয়েছে ১৪ জনের মনোনয়ন। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে কারো মনোনয়ন অবৈধ হয়নি। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে - কুড়িগ্রাম-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির শেফালী বেগম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সুফিয়ান, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা, জাকের পার্টির মশিউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউজ্জামানর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা: হামিদুল হক খন্দকার। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্বতন্ত্র শাহ নুর-ই শাহী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মোহাম্মদ আবু শামিম হাবীব, তৃণমুল বিএনপির আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আব্দুল হামিদ, স্বতন্ত্র জোবাইদুল ইসলাম বাদল, স্বতন্ত্র ফারুকুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র মাছুম ইকবাল।
নীলফামারী
নীলফামারীর চারটি আসনে ৩৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ২৭ জনকে বৈধ এবং ১০ জনের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ।
যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছে - নীলফামারী-১ আসনে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির করুনাময় মল্লিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান কবির চৌধুরী জনি, নীলফামারী-২ আসনের ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির প্রার্থী বিকাশ চন্দ্র অধিকারী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, নীলফামারী-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা, হুকুম আলী খান, মো. রোকুনুজ্জামান ও বাংলাদেশ কল্যান পার্টির বাদশা আলমগীর এবং নীলফামারী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম।
পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের দুটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে ১৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ও ৪ জন প্রার্থীর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম।
এর আগে দুটি আসনে ২০ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে ১৫ জন এবং পঞ্চগড়-২ আসনে ৫ জন প্রার্থী ছিলেন।
অবৈধ প্রার্থীরা হলেন- পঞ্চগড়-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তোয়বুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মিল্টন রায় ও মুক্তিজোটের আব্দুল মজিদ।
ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও জেলার তিনটি আসনে ২০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১৮ জনকে বৈধ এবং ২ জনের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকতা মাহবুবুর রহমান।
অবৈধ প্রার্থীরা হলেন- ঠাকুরগাঁও-১ স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা আখতার মোল্লা এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. আশা মনি।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনে ৩৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া হলফনামায় তথ্য গোপন, নমুনা ভোটারের স্বাক্ষর ও তথ্যের গড়মিলসহ বিভিন্ন কারণে ১৭ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৫টি আসনে ৫২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন বলে জানান রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল।
অবৈধ প্রার্থীরা হলেন- গাইবান্ধা-১ আসনে স্বতন্ত্র মোস্তফা মহসিন, খেলাফত আন্দোলনের হাফিজার রহমান সরদার, আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, এবিএম মিজানুর রহমান ও গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলাম। গাইবান্ধা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর, মাসুমা আক্তার, রফিকুল ইসলাম, সাজেদুর রহমান এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবু তাহের সায়াদ চৌধুরী।
গাইবান্ধা-৩ আসনে জাসদের খাদেমুল ইসলাম খুদি ও স্বতন্ত্র আবু জাফর তৈয়ব। গাইবান্ধা-৪ আসনে এনপিপির রুমি আকরাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন ও শ্যামলেন্দু মোহন রায় এবং গাইবান্ধা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলি ও এইচ এম এরশাদ।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাট জেলার ৩টি আসনে ২৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছিলেন। এদের মধ্যে ১৯ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। যাচাই-বাছাইয়ে অবৈধ হয়েছে ৮ জনের মনোনয়ন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যাদের মনোনয়ন অবৈধ হয়েছ- লালমনিরহাট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধান, আব্দুল বাকী ও কেএম আমজাদ হোসেন তাজু। লালমনিরহাট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ বর্মন, হালিমা খাতুন, জাকের পার্টির রজব আলী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেলাব্বর রহমান এবং লালমনিরহাট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাবেদ হোসেন বক্কর।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ