ছোট্ট প্রীতমের বাবা-মায়ের দিন কাটে চোখের জল ফেলে
আড়াই বছরের ছোট্ট শিশু প্রীতম চন্দ রয়। এই বয়সে দুরন্তপনায় মেতে থাকে প্রীতমের বয়সের শিশুরা। দুষ্টুমি করে বেড়ায় বাড়ির আঙিনায়। তা দেখে মন জুড়ায় বাবা-মায়ের। কিন্তু প্রীতমের বাবা-মায়ের দিন যাচ্ছে চোখের জল ফেলে। কারণ ছোট্ট প্রীতমের হার্টে জন্মগত ত্রুটি রয়েছে। যার ফলে অন্যান্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না প্রীতম। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও হারিয়ে ফেলে জ্ঞান।
মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ার হাওর পাড়ের দুর্গম এলাকা শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের উৎপল ও কৃষ্ণা দম্পতির সন্তান প্রীতম চন্দ। বাবা উৎপল চন্দ শীল একজন মানসিক রোগী, মা কৃষ্ণা গৃহবধূ।
বিজ্ঞাপন
ডাক্তার জানিয়েছেন, প্রীতম জন্মগত হার্টে ছিদ্রসহ আরও কিছু জটিল সমস্যা নিয়ে জন্ম নিয়েছে। তার ত্রুটিপূর্ণ হার্টে অপারেশন প্রয়োজন।
প্রীতমের মা কৃষ্ণা চন্দ শীল বলেন, জন্মের পর থেকে সে যখন বুকের দুধ খেত তখন বুকে দুধ আটকে সারা শরীর শক্ত হয়ে অজ্ঞান যেত। ঠান্ডা লাগলে তার গায়ের রঙ কালো ও নীল বর্ণ হয়ে যেত। এরকম মাস খানিক যাওয়ার পর আমরা ডাক্তার দেখাই। তখন জানতে পারি আমার ছেলের এতো বড় সমস্যা নিয়েই জন্ম হয়েছে। এরপর থেকে ওষুধ চলতেছে কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না। এখনও সে হাঁটতে গেলে পড়ে যায়। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমি মা হয়ে এটা আর সহ্য করতে পারছি না।
শিশুটির বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও ছেলের কষ্ট অনুভব করতে পারেন তিনি। ছেলের কষ্ট দেখে অঝোরে চোখের জল ফেলেন মানসিক রোগী বাবা। প্রীতমের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী প্রীতমের চাচা উত্তম চন্দ্র শীল। পেশায় নরসুন্দর উত্তম তার মানসিক রোগী বড় ভাই, তার পরিবার আর অসুস্থ ভাতিজাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
চাচা উত্তম চন্দ শীল বলেন, আমি পরিবারের সবার ছোট। বড় ভাইয়েরও মানসিক সমস্যা। পরিবার চালাতেই আমি হিমশিম খাচ্ছি। অসুস্থ ভাই আর ভাতিজাকে কিভাবে চিকিৎসা করাব। অর্থাভাবে ধার দেনা করে আড়াই বছর ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। ওষুধে আর কাজ না হওয়ায় ভাতিজাকে বাঁচাতে সৃষ্টিকর্তা আর বিত্তবানদের ওপর এখন শেষ ভরসা।
প্রতিবেশী যুবক কাহার খান বলেন, এই পরিবারটা অনেক গরিব। তার মধ্যে ভাইও অসুস্থ। ভাতিজাকে নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট-ঢাকা চিকিৎসার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে দু লাখ টাকার মতো শেষ। কিছু টাকা আমরা বন্ধু-বান্ধব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকি টাকা ঋণ করে এনে ভাতিজার চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছে। এখন বিত্তবানরা এগিয়ে এলেই প্রীতমকে বাঁচানো সম্ভব।
প্রীতম ঢাকার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত চিকিৎসক অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক নুরুন নাহার ফাতেমার কাছে চিকিৎসাধীন। তার ব্যবস্থাপত্র দেখে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের সাবেক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সৈকত দাস বলেছেন, বাচ্চাটি হার্টে জন্মগতভাবে ছিদ্র নিয়ে জন্ম নিয়েছে। তার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি জটিল সমস্যা রয়েছে। যার কারণে মেডিসিন দিয়ে আর কিছু করা সম্ভব না। সার্জারি এখন একমাত্র সমাধান। এই সার্জারি যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সরকারিভাবে করাতে গেলেও ৫-৭ লাখ টাকার প্রয়োজন। দ্রুত হার্টের সার্জারি না করলে প্রীতমের বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।
সোহানুর রহমান/আরকে