আব্দুল আলী বেপারী

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। সবগুলো নির্বাচনে হারিয়েছেন জামনতও। এরপরও নির্বাচন আসলে নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না। এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মো. আব্দুল আলী বেপারী।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিন দুপুরে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের কার্যালয়ে যান আব্দুল আলী। এরপর মনোনয়নপত্র জমা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলীর বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা গ্রামে। তিনি ইট-বালু সরবরাহের ব্যবসা করতেন। তবে এখন অবসরে আছেন। এর আগে কৃষি কাজও করেছেন বলে জানা যায়। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে সবাই শিক্ষিত আর তিনি স্বশিক্ষিত। পরিবারের সদস্যরা তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করলেও তিনি ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন করেন। প্রতিবারই তিনি জামানত হারিয়েছেন। এরপরও নির্বাচনে অংশ নেওয়াই তার শখ।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আব্দুল আলী বেপারী বলেন, তিনবার ইউপি নির্বাচন করেছি, কিন্তু জয়লাভ করতে পারিনি। ইউপি নির্বাচন করে জামনতও হারিয়েছি, তারপরও আমি হতাশ নই। এবার সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। এই নির্বাচনে আমার পরিবারের লোকজন, এমনকি আমার স্ত্রীও যদি আমারে ভোট না দেয় তাতেও দুঃখ নাই। আমার কোনো দলবল নেই, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সাত কোটি কম্বল এলো আমার কম্বল কই? ভোটের দিন যেন আমি নিজের ভোটটা দিতে পারি সেটাই বড় কথা, কে আমারে ভোট দিল, আর কে দিল না তা জানার বিষয় না।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন এলে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না, নির্বাচন এলেই মন চায় প্রার্থী হই, এটাই আমার শখ। জনগণ ভোট দিয়ে আমাকে কিনে নেবে, আমি গোলাম হয়ে আপনাদের পাশে থাকবো। কারণ আমি টাকার গোলাম হতে চাই না। আমি নিজের ভোট পেলেই খুশি। আমার পরিবারের সবাই এমনকি আমার স্ত্রীও নির্বাচন করতে নিষেধ করলেও আমার মন চায় নির্বাচন করতে। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াইছিলাম, তখন মনোনয়নপত্র এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে আসি। আমার স্ত্রী জানার পর গলায় দা ধরেছিল। এরপরও আমি নির্বাচন করেছি। এখন পরিবারের লোকজন খুব-একটা নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা দেয় না। যতদিন বাঁচি নির্বাচন করেই যাব।

সংসদ সদস্য হিসেবে কেন নির্বাচন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আলী বেপারী বলেন, আমি কৃষিকাজ করতাম। এরপর ইট-বালু সরবরাহের ব্যবসা শুরু করি। সে সময় ঘিওরে বিএনপির এক নেতার বাড়িতে কাজ শুরু করছিলাম। আমি যখন তার বাড়িতে যাইতাম তখন তিনি বলতেন, ‘আপনি কে, কি চাই?’ এই কথা শুনার পর আমি বললাম আপনার বাড়িতে আসার রাস্তা আছে, কিন্তু আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কোনো রাস্তা নাই। বিএনপির ওই নেতা বললেন, ‘এইভাবে হবে না, আপনাকে চিনি না, কিছু একটা হইয়া আইসো তার পর দেখবোনি।’ তার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলু। আমি ক্ষুদ্র একজন মানুষ হওয়ায় তিনি আমার কথা শুনলেন না। পরে বাড়িতে পরে বাড়ি আইসা নির্বাচন করার চিন্তা করলাম। এলাকার মানুষজনের পরামর্শে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্বাচন করলাম।

তিনি বলেন, সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি দেখবো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি ভোট পাই কিনা। ভোট না পাইলে যে দেশে বিচার আছে সেই দেশে যামু। ৭ কোটি কম্বল আসলেও বঙ্গবন্ধু তার কম্বলের জন্য বিচার চাননি। আমার ভোট যদি কিছু হয়, আমি বিচার চামু? নিজের ভোটটা পাইলেই আমি শান্তি পামু।

সোহেল হোসেন/আরএআর