ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ থেকে শাহজাহান ওমরকে নৌকা দিলেও বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না রাজাপুর, কাঁঠালিয়ার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিএনপি থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী কেউই থাকছেন না শাহজাহান ওমরের পাশে।

কাঁঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কর্মী ইউসুফ সিকদার বলেন, শাহজাহান ওমরকে কি দেখে মনোনয়ন দেওয়া হলো তা বুঝতে পারছি না। তার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়নি এমন আওয়ামী লীগের পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না রাজাপুর-কাঠালিয়ায়। তিনিই যখন নৌকা প্রতীক পেলেন তখন আমাদের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। 

উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, সব সময়ে সুবিধার পক্ষে ছিলেন শাহজাহান ওমর। বিএনপির আমলে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নয় বিএনপির লোকজনও তার হাত থেকে নিস্তার পাননি। বিএনপির দুঃসময়ে সে দল ছেড়ে চলে গেছে। অথচ রাজনীতিতে আজকের শাহজাহান ওমর বিএনপি দিয়েই হয়েছেন। তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক।

কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল সমাদ্দার বলেন, শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন অনেক কথা থাকলেও বলা যাবে না। আমরা দলের রাজনীতি করি। তবে আমরা অপেক্ষায় আছি আমাদের নেতা আমির হোসেন আমুর সিদ্ধান্তের। তিনি শেষ পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মেনে নেব।  

রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শাহজাহান ওমরের হাত-পা ধরে বলেছি আপনি বেইমানি করবেন না। আমরা দুঃসময়ে বিএনপির সঙ্গে আছি। আপনি বেঈমানি করলে আমাদের জন্য তা দুর্ভাগ্যের। আজকের যে শাহজাহান ওমর হয়েছেন তিনি, তাতো বিএনপির হাত ধরেই। সেই বিএনপির সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করলেন তিনি।

নাসিম আকন বলেন, উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা সরকার পতনে সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মৃধা বলেন, বিএনপির শাসনামলে শাহজাহান ওমরের দ্বারা শুধু আওয়ামী লীগ নয় যারাই বিএনপির বিরুদ্ধে ছিলেন তাদের সকলকে নির্যাতন, হামলা, মামলা করে নাস্তানাবুদ করেছেন। অনেক লোককে পঙ্গু করে দিয়েছেন। তারপরও যেহেতু কেন্দ্র তাকে নমিনেশন দিয়েছেন সেজন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার নির্বাচন করতে হবে। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এএইচএম খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, আমাদের আসনে টানা তিনবার বজলুল হক হারুন আগের এমপি। তিনি এলাকায় আসেন না, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। এমনকি বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এসব কারণে মূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বজলুল হক হারুনের পক্ষে নেই।

খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, বিএনপির আমলে রাজাপুর-কাঠালিয়ার এমন কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নেই যাদের নির্যাতন করেনি শাহজাহান ওমর। শাহজাহান ওমর ১৯৯১ সালে আমাকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছে। ২০০১ সালের পর তার লোকজন দিয়ে আমার বাড়িঘর লুট করিয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের অবস্থান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানিয়েছি। শাহজাহান ওমর মনোনয়ন পাওয়ায় ঝালকাঠি-১ আসনের কোনো নেতাকর্মী স্বস্তিতে নেই। এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। তার চেয়ে বজলুল হক হারুন ভাল ছিলেন। তিনি এলাকায় না আসলেও অন্তত আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন। কিন্তু শেষে যা হলো, একজন বিএনপির লোককে যদি আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে মেনে নিতে হয় এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই।

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ঝালকাঠি ১ আসনে দুজনকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলেও বাছাইয়ে একজন বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুজনতো আর নৌকার হয়ে নির্বাচনে থাকতে পারবেন না। সর্বশেষ ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই নৌকার বাইরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা যেতে পারে না।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় তাকে। প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দি থাকার পর গত বুধবার দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তাকে ঝালকাঠি–১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বলে জানান। এরপরই মূলত আলোচনা-সমালোচনার সূত্রপাত হয়।

উল্লেখ্য, শাহজাহান ওমর ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাকেরগঞ্জ-১২ (বর্তমানে বিলুপ্ত) আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া ঝালকাঠি ১ আসন থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে তিনি সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

 এএএ