১২ বছরের শিশু নুসরাত। যে বয়সে হেসেখেলে বেড়ানো এবং স্কুলে যাওয়ার কথা, সে সময় শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতা‌লের বেডে কাটছে তার সময়। 

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির মা লায়লী বেগম পাশে বসে চোখের জল ফেলছেন। উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন মেয়ের দিকে। মাঝেমধ্যে মেয়ের কাছে ভালো-মন্দ জানতে চাচ্ছেন। বিড়বিড় করে মেয়ে জানাচ্ছে, ভালো লাগছে না তার। খুব যন্ত্রণা হ‌চ্ছে।

কথা বলে জানা যায়, শিশুটিকে গত ২ সে‌প্টেম্বর এক‌টি কুকুর কামড় দেয়। তবে তার চিকিৎসা শুরু হয় এক‌ দিন পর। ভ‌্যাক‌সিন নেওয়ার প‌রও আক্রান্ত স্থা‌নের ব্যথায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে সে।

নুসরাতের মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ে গত প্রায় তিন মাস ধরে অসুস্থ। টাকার অভাবে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে আমার মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারব। 

সরকারি ভ্যাকসিনের বিষয়ে জানতে চাইলে নুসরাতের মা বলেন, হাসপাতাল থেকে ছয়টি ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আমাকে একটি ভ্যাকসিন বাইরে থেকে কিনতে বলে। আমি হাসপাতালের হেলাল নামের একজনকে ১ হাজার টাকা দিই। এর পরের দিন আমাকে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন কার্যালয় যেতে বলে। সেখানে মেয়েকে নিয়ে গেলে ফ্রিজ থেকে বের করে একটি ভ্যাকসিন দেয়। কিন্তু এরপর থেকেই আমার বাচ্চা সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে অসুস্থ হতে থাকে। আমার মনে হয় হেলাল আমার মেয়েকে ভ্যাকসিনের পরিবর্তে অন্য কিছু পুশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের ক্ষত স্থান এখনো শুকাচ্ছে না। সব সময় কান্না করছে। আমার হাতে তেমন টাকাও নেই যে বাইরে গিয়ে মেয়েকে চিকিৎসা করাবো। তারপরও মেয়েকে দিনাজপুর ও রংপুর নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে আবারও ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ফিরে এসেছি। আমার মেয়ে দিন দিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহকারী স্টোরকিপার মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, রেইবিজ ইমিউন গ্লবিউলিন ভ্যাকসিন হাসপাতালে না থাকায় একজন ডাক্তার আমাকে ফোন করে বলেন যে আমি একটি লোক পাঠাচ্ছি আপনি একটি ভ্যাকসিন দিয়ে দেন। পরবর্তীতে আমি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সেই ভ্যাকসিন পুশ করে দিই।

আপনি পুশ করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হেলাল উদ্দীন বলেন, আমি পুশ করতে পারব। কেননা এ বিষয়ে আমি ডিগ্রিধারী।

নুসরাত ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মিলননগর এলাকার মো. হারুনের মেয়ে। বর্তমানে সে ঠাকুরগাঁও আর কে স্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ের  চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নুসরাত আমাদের স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। আমি বিষয়টা জেনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছি। তার যেন ভালো চিকিৎসা হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। মেয়েটির পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। সকল শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসক তোজ্জাম্মেল হক বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো হাসপাতালে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। তাই এখানেই (ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল) চিকিৎসা নিচ্ছে। আমরা তা‌কে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। কামড় দেওয়া ৯০‌ দিন না যাওয়া পর্যন্ত তার বিষ‌য়ে কিছু বলা যা‌চ্ছে না। 

ঠাকুরগাঁও সি‌ভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ ব‌লেন, ভ্যাকসিন কিনে পুশ করার কোনো নিয়ম নেই। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তিনি (মো. হেলাল উদ্দীন) পুশ করেছেন। আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছি। যত দ্রুত সম্ভব তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরিফ হাসান/এমজেইউ