চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষকলীগের সভাপতির অফিসে হামলা-ভাঙচুর, আলমডাঙ্গা উপজেলার একটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ৯ নেতার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর এ হামলার ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজ ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আমরা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবু দিলীপ কুমার আগরওয়ালের পক্ষে কাজ করছি। তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় আমাদের বাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর নেতাকর্মীরা।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের বাড়ির সামনে জেলা কৃষকলীগের অফিসের ১৫-২০টা চেয়ার ভাঙচুর ও মোমিনপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ন কবিরের বাড়ির মেইন গেট ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মহাসিনের ওষুদের দোকান, আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়, একই ইউনিয়নের যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদ ও বাইতুল, সিরাজুল ইসলাম, একই উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায় তারা।

জেলা কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই আমার জেলা কৃষকলীগের অফিসের চেয়ারগুলো কুপিয়ে ও ভাঙচুর করা করেছে। যারা এটা করেছে তারা নব্য আওয়ামী লীগ। নেতৃত্ব দেন মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আব্দুল্লাহ আল মামুন (রতন)। একই সঙ্গে আমার মোমিনপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়নের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং গালিগালাজ করেছে। ভাঙচুরের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নমিনেশন তো অনেকেই চাইতে পারেন। দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করেছি বলে এঘটনা ঘটিয়েছেন তারা।

ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করায় আমিসহ আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েজনের বাড়ি ও বাড়ির মেইন গেটে ভাঙচুর করে মনোনয়ন পাওয়া সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের কর্মীরা। এঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শক করেছে।

মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনোনয়ন পাওয়ায় সন্ধার পর আমরা আনন্দ মিছিল করে চলে এসেছি। কে বা কারা এঘটনা ঘটিয়েছে আমরা জানি না। তারা নিজেরাই এসব ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করছে। এমন নোংরা রাজনীতি আমরা করি না।

এ বিষয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে এবং সারাজীবন থাকবে। তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে যাকে নৌকার মাঝি করেছেন, তাকে অভিনন্দন জানাই। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, নৌকা যার, আমি তার। আমি নৌকা প্রতীকের বিজয়ে কাজ করে যাব। চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার তৃণমূলের নেতাকর্মীরাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানি। তাই তাদের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। আমি আমার নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব।

তিনি আরও বলেন, তবে দুঃখজনক বিষয় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে যিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, তার নেতাকর্মীরা কোনো কারণ ছাড়াই আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর করছে। এতে আমার বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পিপিএম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুরের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ৪-৫টা চেয়ার ভাঙচুর করেছে। আলমডাঙ্গাতে আনন্দ মিছিলের সময় গালিগালাজ ও একটা দুইটা ঢিল ছুড়েছে।

কারা এঘটনা ঘটিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপ (মনোনয়ন পেয়েছে) করেছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‍্যাব আছে। ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

আফজালুল হক/আরকে