আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ৫৮টি আসনের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৫৭৮টি। তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এরপর শুরু হয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।

চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনের প্রতিটিতে আছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এখনো নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি।

দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন নেতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে নৌকা প্রতীকে নতুনদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন এবার বর্তমান সংসদ সদস্যদের কয়েকজন মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নৌকার মনোনয়ন পেতে চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে সর্বোচ্চ ২১৭ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। সবচেয়ে কম পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। পাহাড়বেষ্টিত এ জেলার একটি মাত্র আসনে নৌকার মনোনয়ন কিনেছেন দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

চট্টগ্রাম বিভাগের সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকসহ দলের একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের এগারো জেলার ৫৮টি আসনে প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা সম্ভাব্যদের নাম জানতে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধিরা। তাদের পাঠানো তথ্য অনুসারে কারা পেতে পারেন মনোনয়ন সেই সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বড় জেলা চট্টগ্রাম। এ জেলার মোট ১৬টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ২১৭ জন।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আসন। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন পাঁচজন। বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার মনোনয়ন কেনেননি। তার জায়গায় ছেলে মাহবুবুর রহমান এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। ফলে পিতার পরিচয় বিবেচনা করলে তিনিই এগিয়ে আছেন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের শরীক তরিকত ফেডারেশনের দখলে। বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। বিএনপি নির্বাচনে না এলে আসনটি এবারও তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে আসনটি উদ্ধার করতে মনোনয়ন চেয়েছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এগিয়ে আছেন।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাসহ মোট ১২ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাই মনোনয়ন পাওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড, চসিকের একাংশ) আসনে মোট ১৩ জন নৌকার টিকিট চান। তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। তিনি বাদ পড়লে সদ্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা এস এম আল মামুনের ভাগ্য খুলতে পারে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে এখন আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টির দখলে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে এবারও আসনটিতে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ ছেড়ে না দিলে এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীকে ছাড়াও আরও ৮জন মনোনয়ন কিনেছেন। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য ফজলে করিমকে এগিয়ে রাখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি ছাড়াও ওসমান গনি চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন। তবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদেরই নৌকার টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চসিকের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ২৮ জন। বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন আরশেদুল আলম বাচ্চু ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম।

চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তার পাশাপাশি এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ. জ. ম নাছির উদ্দীন। এই দুজনের কোনো একজন মনোনয়ন পেতে পারেন।

চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, ডবলমুরিং) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়া উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনি ছাড়াও আ. জ. ম নাছির উদ্দিনসহ ১৯ জন আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। আ. জ. ম নাছির উদ্দিনকে মনোনয়ন না দিলে এখানেও তার কপাল খুলতে পারে।

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন ২৮ জন। তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ লতিফ তিনবারের সংসদ সদস্য। ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেওয়া সংসদ সদস্য এমএ লতিফ আবারও মনোনয়ন পেতে পারেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ছাড়াও ১৬ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এ আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য। এবারও তাকেই বেছে নিতে পারে আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তাকে ছাড়া এ আসনে কারও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ- সাতকানিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলামসহ ১৭ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বললেই চলে।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনে মোট ১৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। একসময় জামায়াতের ঘাঁটি ছিল এ আসন। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি অনুসরণ করে গত দুবার এই আসনে আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নানা বিতর্ক থাকলে এবারও এই আসনে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ ১৪ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এগিয়ে রয়েছেন। তবে কোনো কারণে তিনি বাদ পড়লে সেক্ষেত্রে মনোনয়ন পেতে পারেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি মুজিবুর রহমান।

বান্দরবান

পার্বত্য বান্দরবান জাতীয় সংসদের ৩০০ নম্বর আসন। জেলার একটি মাত্র আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন পাহাড়ের বাহাদুর খ্যাত বীর বাহাদুর উশৈসিং ও কাজী মুজিবর রহমান। কাজী মজিবর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বান্দরবান থেকে টানা ছয়বার এমপি পদে নির্বাচিত হয়েছে বীর বাহাদুর উশৈসিং। তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সর্বশেষ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বীর বাহাদুর উশৈসিংই মনোয়ন পাবেন এমনটাই আশা তৃণমূল আওয়ামী লীগের।

রাঙামাটি

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার একটি মাত্র সংসদীয় আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদারসহ মোট ১১ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। দীপংকর তালুকদার এ আসন থেকে চারবারের সংসদ সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ আসন থেকে দীপংকর তালুকদারকে বাদ দেওয়া হবে না এমনটাই জানিয়েছে তৃণমূল। যদি তাকে বাদ দেওয়া হয় তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।

খাগড়াছড়ি

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে একটি মাত্র সংসদীয় আসন। আসনটি থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ মোট ১০ জন। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা দুইবারের সংসদ সদস্য। এছাড়াও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। এই আসনে তাকেই দেওয়া হতে পারে নৌকার টিকিট। তবে তিনি যদি কোনো কারণে বাদ পড়েন তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরার নাম আলোচনায় রয়েছে।

কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি সাঈদুল ইসলাম ফরহাদ জানিয়েছেন, কক্সবাজারের ৪টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন মোট ৩৫ জন। এরমধ্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমসহ ১০ জন। জাপা অধ্যুষিত এই আসনটিতে ২০১৮ সালে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর জয় পায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা। ৫ বছরে তিনি জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ বেশ কিছু বিতর্কের জন্ম দেন। ফলে এবার তাকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নাও দিতে পারে। তবে আসনটি যেহেতু মহাজোটের সেহেতু বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ তাদের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ছাড়াও এই আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা ও জেলা সভাপতি অ্যাড. ফরিদুল ইসলাম। দুই বাঘা নেতা দলীয় প্রতীকের জন্য মনোনয়ন কিনলেও তেমন কোনো সাড়াশব্দ নেই। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহেশখালীর মাতারবাড়িতে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে জনগণের হাতে তুলে দেন। ফলে এ আসন থেকে তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা একরকম নিশ্চিত।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু ও ঈদগাঁ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলরা ৩ ভাই-বোনসহ মোট ৩ জন। তবে ১০ বছরের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার এবারও মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। যদিও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সংসদ সদস্য কমলের বিরুদ্ধে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং তার ভাই রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সারওয়ার কাজল এবং বোন নাজনীন সরওয়ার কাজল। সংসদ সদস্য কমল মনোনয়ন না পেলে কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ পেতে পারেন এ আসনের মনোনয়ন। 

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে দলীয় ফরম কিনে জমা দিয়েছেন আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। একই আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বদির স্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার। তবে এবার আসনে নতুন মুখ আসতে পারে বলে জানিয়েছে তৃণমূল। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে আব্দুর রহমান বদির শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে নিয়ে। তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন এ আসন থেকে।

ফেনী

ফেনী প্রতিনিধি তারেক চৌধুরী জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের ৩২ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে ফেনী-১ (পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এগিয়ে রয়েছেন। তবে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এ আসনে দীর্ঘ ৫০ বছর এমপি পায়নি আওয়ামী লীগ। জোটের রাজনীতির কারণে গত দুবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এবার স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে দীর্ঘদিনের খরা কাটাতে চায় দলটি।

ফেনী-২ (সদর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী দলীয় প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনে বর্তমান আওয়ামী রাজনীতিতে দুইবারের এমপি নিজাম হাজারীর বিকল্প নেই এমনটিই বলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

ফেনী-৩ (সোনাগাজী, দাগনভূইয়া) আসনে জেলার সর্বোচ্চ ১৪ জন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য বায়রার সভাপতি আবুল বাশার এবং জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটনও আলোচনায় রয়েছেন। 

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি হাসান মাহমুদ শাকিল জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে ১০ জন, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসন থেকে ৬ জন, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসন থেকে ১০ জন এবং লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমল নগর) আসন থেকে ৭ জন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন।

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন খানের তৃণমূলে জনসমর্থন বেশি রয়েছে। ফলে এ আসনে এবারও তাকেই মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে তিনি বাদ পড়লে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলামের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। এ আসনে এর আগে সংসদ সদস্য ছিলেন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। কুয়েতের আদালতে পাপুলের ৭ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় সংসদ সদস্য পদ হারান পাপুল। পরে আসনটিকে শূন্য ঘোষণা করা হলে ২০২১ সালের জুনের উপনির্বাচনে নূরউদ্দিন চৌধুরী নয়নকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে এবারও তিনিই মনোনয়ন পাবেন। তিনি কোনো কারণে বাদ পড়লে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও এসেনশিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এহসানুল কবীর জগলুল এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপপরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শামসুল ইসলাম পাটওয়ারী আলোচনায় রয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু। ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনে নৌকায় মনোনয়ন পাওয়ায় এবারও নিশ্চিত। তবে তিনি কোনো কারণে বাদ পড়লে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সাত্তার আলোচনায় রয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান। এবার আসনটি পুনরুদ্ধার করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে নৌকার টিকিট দেওয়া হতে পারে। তিনি না পেলে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন।

নোয়াখালী

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি হাসিব আল আমিন জানিয়েছেন, নোয়াখালী জেলার ছয়টি আসন থেকে ৩৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে নোয়াখালী-১(চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসন থেকে ৭ জন, নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসন থেকে ৯ জন, নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসন থেকে ৫ জন, নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসন থেকে ৭ জন, নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসন থেকে একজন এবং নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে ৫ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহিমকেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তৃণমূলে তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।

নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদ আলমকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ কিরণকে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভিমত।

নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের এমপি। এ আসনে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সুতরাং তিনিই পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউসকেই পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

চাঁদপুর

চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক জানিয়েছেন, চাঁদপুরের ৫টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের ৫৫ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে ৭ জন, চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ-মতলব উত্তর) আসনে ১২ জন, চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে ৭ জন, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে ১৭ জন এবং চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসন থেকে ১২ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দন খান আলমগীর আওয়ামী লীগে চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি বাদ পড়লে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ নয়তো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের আলহাজ মো. গোলাম হোসেন।

চাঁদপুর-২ (মতলব-দক্ষিণ) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে কোনো কারণে তিনি বাদ পড়লে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন রুহুল নয়তো মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন।

চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি আবারও মনোনয়ন পেতে পারেন। যদি কোনো কারণে তিনি বাদ পড়েন তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী মনোনয়ন পেতে পারেন।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বাদ পড়লে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান। এছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূইয়াও আলোচনায় রয়েছে।

চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম আওয়ামী লীগে চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন আলোচনায় রয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি মাজহারুল করিম অভি জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের ৬২ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি বাদ পড়লে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা নাজির মিয়া নয়তো আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম এ করিম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের চিত্র সবসময় ভিন্ন থাকে। ৩০ বছর বছর এই আসনে সদ্য হওয়া উপ-নির্বাচনে নৌকা মনোয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজু। এর আগে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল আসনটি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মাইনুদ্দিন মঈন আওয়ামী লীগে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী মন্টু।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ফের নৌকার টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে হাঁক-ডাক দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনের মাঠে নৌকার টিকিট চেয়েছেন লায়ন ফিরোজুর রাহমান ওলিও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে নির্বাচনে মাঠে আছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এই আসনটিতে তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছে নৌকার টিকিট যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সমান আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল ও সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল। আর নতুনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনেও নৌকার টিকিট পাবেন বলে এক প্রকার নিশ্চিত রয়েছেন বর্তমান সংসদ ক্যাপ্টেন এ.বি তাজুল ইসলাম।

কুমিল্লা

চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা কুমিল্লা। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলা ১১টি আসনে বিভক্ত। ১১টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে ফরম কিনে তা জমা দিয়েছেন মোট ৮৯ জন।

কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন মোট ৯ জন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূইয়া ২০০৮ সাল থেকে টানা ৩ বারের সংসদ সদস্য। ক্লিন ইমেজের এই সংসদ সদস্যের বেশ বয়স হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছেন তিনি। তবে বয়স বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন নাও পেতে পারেন বলে ধারণা করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এই আসনে অপর হেভিওয়েট নেতা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে তিতাস উপজেলাকে রাখা হয়েছে দাউদকান্দির সঙ্গে। ফলে, তিতাস উপজেলার আওয়ামী লীগের মূল ভোটব্যাংকটি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরের দখলে রয়েছে। এ ছাড়া দাউদকান্দি এবং তিতাস উপজেলায় বেশ জনপ্রিয় ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। 

কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরি। আওয়ামী লীগ তাকে এবারও তাকে মনোনয়ন দেবে এমনটাই শোনা গেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মুখে।

কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন ৪ জন। সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের বয়স হয়েছে। এ আসনের তৃণমূল আওয়ামী লীগে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। এখানকার আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের পক্ষে থাকলেও বৃহৎ একটি অংশ সাবেক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অনুসারী। তিনিও মনোনয়ন বিবেচনায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ আসনে আরেক হেভিওয়েট নেতা ম. রুহুল আমিন। 

কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) কুমিল্লার সবচেয়ে বেশি আলোচিত আসন কুমিল্লা-৪। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সঙ্গে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের দ্বন্দ্ব এবং মারামারি সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় দুজন দুজনকে বুকে জড়িয়ে বিষয়টির সুরাহা করলেও দুজনের বিভক্তি কমেনি। একে অপরকে অনাস্থা জানিয়ে মহাসড়কে ঝাড়ু মিছিল করেছেন কয়েকবার। ফলে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের ইমেজ সংকট রয়েছে। এ দুজন ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, নিউইয়র্ক শেখ রাসেল পরিষদের সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার।

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) কুমিল্লার আসনগুলোতে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসনে। এখান থেকে মোট ২৬ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মতিন খসরু এই আসনে ৪ বারের সংসদ সদস্য। মতিন খসরুর মৃত্যুর পর ২০২১ সালে উপ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ এবারও তাকেই মনোনয়ন দেবে এমনটাই মনে করছে তৃণমূলের কর্মীরা। 

কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনটি জেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটি দীর্ঘসময় ধরে বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের হাত ধরে আসনটি উদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। এরপর টানা তিনবারের সংসদ সদস্য তিনি। এবারও আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। 

কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফের জনপ্রিয়তা এখনও মুখে মুখে। তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুর সঙ্গে ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব এ আসনে স্বস্তিতে নেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। 

কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি ছাড়াও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, শিল্পপতি এজেডএম শফিউদ্দিন শামীম মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও এগিয়ে আছেন।

কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের একক আধিপত্য রয়েছে। তার মনোনয়নের বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত এ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই, নাঙ্গলকোট) কুমিল্লার সবচেয়ে বড় আসন এটি। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন। তাকে এবারও বাদ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। 

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার রেজা বীরপ্রতীক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা তমিজউদ্দীন সেলিমের আলোচনা চলছে। এ ছাড়া সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান ভূইয়ার আলোচনাও রয়েছে।

এএএ