আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ২৯৯ নং আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন মোট ১১ জন। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও রয়েছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তারা সকলেই আশাবাদী। 

১১ জনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এম রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সুমন। 

রাঙামাটি আসনে মনোনয়ন সংগ্রহকারীরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কামাল উদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা, আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমরেশ দেওয়ান, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাঙামাটি জেলার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার দে, অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন স্নেহ কান্তি চাকমা, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মতিন। তার মধ্যে জসিম উদ্দীন চৌধুরী রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি দুই আসনের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

এই ১১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার ১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৬ বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৪ বার জয়ী হয়েছেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০৮ সালে নবম এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ান এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকাদারের কাছে পরাজিত হন।  

এই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নিখিল কুমার চাকমা বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। গত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সভাপতি পদে প্রতিযোগিতা করলেও একপর্যায়ে দলের বর্তমান সভাপতি দীপংকর তালুকদারকে সমর্থন জানিয়ে সরে যান তিনি।

মনোনয়নের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা বলেন, আমি দলের একজন সদস্য হিসেবেই দল থেকে মনোনয়ন নিয়েছি। মনোনয়ন দেওয়া হবে কিনা সেটা বিবেচনা করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি আশা করি তিনি যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন। তবে দল থেকে যে সিদ্ধান্তই দেওয়া হবে সেটা আমি গ্রহণ করবো এবং দল ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাব।

বর্তমানে রাঙামাটি আসনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর নামই শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এছাড়াও যারা মনোনয়ন নিয়েছেন তারা অনেকেই দলের বিভিন্ন পদে আসীন রয়েছেন।

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাঙামাটি জেলার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার দে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন বঞ্চিত কর্মী। আমি দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের সাথে আছি। মনোনয়ন ফরমে যেসকল তথ্য চাওয়া হয়েছে যেমন ১৯৭১, ১৯৭৫ এবং ১৯৯০ সালে ভূমিকা কি ছিল, আমি সেসব পূরণ করতে পেরেছি, যা অনেকেই পারবেন না। আমি দলের জন্য কখন কি করেছি তা সব উল্লেখ করেছি। বিরোধী দলে থাকাকালীন আমার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে, আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। একজন নির্যাতিত কর্মী হিসেবে আমি আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, আমি আমার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি । মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

মিশু মল্লিক/আরএআর