যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্‌যাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা সেনানিবাসের মসজিদে দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে দিবসটি শুরু হয়।

এরপর এমআর চৌধুরী প্রাঙ্গণে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাবাহিনীর ৯৭৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার কুমিল্লা এরিয়া মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং তাদের নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন। এরপর কেক কেটে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, দেশের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে। দুর্যোগ, উন্নয়ন কিংবা অন্য যেকোনো কাজে যেখানেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে সেখানেই সেনাবাহিনী প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকার ও জনগণের আস্থা সমন্বিত রাখতে বদ্ধ পরিকর। সশস্ত্র বাহিনী দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

মেজর জেনারেল মো. মাইনুর রহমান আরও বলেন, শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর ১৬৭ জন সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেছেন এবং ২৬১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর দৃঢ়তা এবং দক্ষতার কারণেই শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি বর্গ ইঞ্চি জমি সর্বোচ্চ জমি ব্যবহারের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেই নির্দেশ পালনের লক্ষ্যে আমরা সেনানিবাসের সকল পতিত জমি ও স্বর্ণদ্বীপের প্রশিক্ষণ এলাকা ব্যতিরেকে সকল অব্যবহৃত জমি কৃষি কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী একটি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা বদ্ধ পরিকর।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে সশস্ত্র বাহিনী। আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে বর্তমান সরকার সবসময় আন্তরিক রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. মো. নাছিম আখতার, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জামাল আবু আছের, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যগণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সম্মিলিত আক্রমণ সূচিত হয়। এর ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা অর্জন করি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ- বাংলাদেশ। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ২১ নভেম্বর যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হয়েছে।

হাসিব আল আমিন/এএএ