নরসিংদীর রায়পুরার পৌর শহরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই তলা ভবন হস্তান্তরের এক বছর পার হতে না হতেই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। 

পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট দেখা দেয়। এতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাশে দুটি টিনশেড ঘরে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এমনটাই জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে চলতি মাসেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ এবং নতুন ভবন নির্মাণে টেন্ডার দেওয়ার কথা জানান রায়পুরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার সোহাগ মিয়া।

জানা গেছে, রায়পুরা পৌর শহরে তাত্তাকান্দায় ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রায়পুরা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০১ সালে ৩ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে এক তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মান করে স্থানীয় এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরে সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দেখা দেয় শ্রেণিকক্ষ সংকট। তা নিরসনে (পিইডিপি-৩) প্রকল্পের আওতায় ৩১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে দোতলা ভবন নির্মাণ করে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এমতাবস্তায় ২০১৭ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট দোতলা ভবনটি হস্তান্তর করে। তবে ভবনটি হস্তান্তরের এক বছরের মাথায় বড় বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই দৃষ্টিনন্দন দোতলা স্কুল ভবনটি পরিত্যক্ত। রঙিন দেয়াল জুড়ে আঁকা বর্ণমালা, ফুল, পাখি ও কবি সাহিত্যিকদের ছবি। শ্রেণিকক্ষ ও দোতলার কলাপসিবল গেট তালাবন্ধ। কারণ নিচ তলায় ভেতর ও বাইরে ভীমেও রয়েছে একাধিক ফাটল। পলেস্তারা খসে পড়ে দেখা যাচ্ছে রড। শিক্ষকদের বসার স্থান না থাকায় ঝুঁকি জেনেও নিচ তলায় অফিস হিসাবে একটি কক্ষ ব্যবহার করছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে পরিত্যক্ত ভবনের দুপাশে দুইটি টিনশেড ঘরের তিনটি কক্ষে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণির ২২০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে অর্ধেকে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

স্থানীয় ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানায়, নিচ তলা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সত্ত্বেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দোতলা নিমার্ণ করা হয়েছে। এতে সরকারি অর্থ অপচয় হওয়ার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠনদানে সমস্যা হচ্ছে। প্রকৌশলীদের অবহেলায় এমনটি ঘটেছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অলক কুমার দাস, তাসফিয়া জাহান রিমি ও মিথিলা আক্তার জিদনি বলেন, আমাদের স্কুল বিল্ডিং পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের অনেক সহপাঠী এ কারণে স্কুল ছেড়ে চলে গেছে। পরিত্যক্ত বিল্ডিং ভেঙে নতুন করে নিমার্ণের দাবি জানান তারা।

রায়পুরা ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান সাদেক বলেন, স্কুলের নিচতলা আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ২য় তলা নির্মাণের আগে আমরা মৌখিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারদের বলেছি, বিভিন্ন পিলার, সিড়িতে ফাঁটল দেখা দিয়েছে, এখানে মনে হয় ২য় তলা নির্মাণ ঠিক হবে না। তখন ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে আমাদের বলা হয়েছিল এটি ৩ তলা ফাউন্ডেশন, এখানে ২য় তলা নির্মাণে কোনো সমস্যা নেই। তাই সেখানে দোতলা নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালের শেষের দিকে ২য় তলা নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০১৭ সালে আমাদের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের ১০ মাস থেকে সবোর্চ্চ এক বছর হয়তো আমরা ভবনটি ব্যবহার করি। পরে ভবনটিতে ফাটল বাড়তে থাকায় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করি। তখন তারা কয়েক দফায় পরিদর্শন শেষে ২০১৮ সালে ইউএনও অফিস ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এবং সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার নিষেধ করা হয়।

রায়পুরা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শামীম ইকবাল মুন্নার বলেন, নতুন ভবন নির্মাণে টেন্ডার হয়েছে। অতি দ্রুত ভবনটি ভাঙা হবে। স্কুলটি নির্মাণে তৎকালীন প্রকৌশলীদের কোনো অবহেলা রয়েছে কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবহেলা থাকার তো কোনো সুযোগই নেই। 

তন্ময় সাহা/আরকে