ফরিদপুরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে ভর্তি তিনগুণ রোগী
শীতের শুরুতেই ফরিদপুরে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রার্দুভাব। জেলার ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই হাসপাতালে ধারণক্ষমতা ১০ জন থাকলেও রোগী ভর্তি আছে ৩৬ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মহিলারা। পাশাপাশি স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সাতদিনে এই হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮৬ জন। হাসপাতালে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের স্যালাইনের সরবরাহের সংকট থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছেন রোগীরা।
বিজ্ঞাপন
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল চত্বরের পশ্চিম দিকের দুইতলা একটি ভবনের নিচতলার ১০ শয্যায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শয্যা সংকটের কারণে কক্ষের ভেতরে এবং বাইরে বারান্দায় রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ফরিদপুরে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চাপ। গত ৬-৭ নভেম্বর থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চাপ বাড়ে হাসপাতালে। গত ১১ নভেম্বর থেকে শিশুদের পাশাপাশি নারী রোগীদের সংখ্যাও বাড়ছে।
এ হাসপাতালে গত ১১ নভেম্বর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়। পরদিন ১২ নভেম্বর ১৯ জন, ১৩ নভেম্বর ৫৬, ১৪ নভেম্বর ৫০, ১৫ নভেম্বর ৩৮, ১৬ নভেম্বর ৪৬, ১৭ নভেম্বর ২৫ এবং ১৮ নভেম্বর ২৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে (১১ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত) সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৫০ জন রোগী। বর্তমানে হাসপাতালের ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বিপরীতে ৮ জন শিশু, ১১ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারীসহ মোট ৩৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসাধীন ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা গ্রামের আবদুল লতিফের স্ত্রী ইছামতি বেগম (৩৬)। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুইদিন আগে। তিনি বলেন, ‘দুইদিন আগে হাসপাতালে আসলেও বেড পাইনি। প্রথমে ভাবছিলাম কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলে বেড পাবানে। পরে দেখি একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলে নতুন আরও দুইজন ভর্তি হয় এজন্য নিজ উদ্যোগে প্লাস্টিকের পাটি কিনে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি।’
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এলাকার হিমায়েত সরদার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম। বাসি-পান্তা কিছুই খাইনি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখি বমি আর পাতলা পায়খানা বাড়ছেই। পরে ওইদিন রাতেই হাসপাতালে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসার পর হাসপাতাল থেকে আমাদেরকে স্যালাইন দেয়নি। বাইরের দোকানগুলোতেও তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকান ঘুরে মিলছে দু-একটি স্যালাইন।
ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রাফেজা খানম বলেন, এখানে ফরিদপুর জেলা ছাড়াও মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলাগুলোর রোগীরাও চিকিৎসা নিতে আসায় চাপ বেশি। গত একসপ্তাহ ধরে এ চাপ আরও বেড়েছে। রোগীদের সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালে স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) গনেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, শীতের প্রারম্ভে সব সময়ই কোল্ড ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। হাসপাতালে স্যালাইনের তীব্র সংকট রয়েছে।একদিনে অন্তত ৬০টি স্যালাইন রোগীদের দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন,আমরা ঢাকায় স্যালাইনের চাহিদা দিয়েছিলাম পাঁচ হাজার প্যাকেট। গত বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) মাত্র ২৪০ প্যাকেট স্যালাইন পাওয়া গেছে। এ স্যালাইন আগামী তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে সাপ্লাই না পাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।
জহির হোসেন/এএএ