কঠোর লকডাউনের আগে ঈদের মতো ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
লেখাপড়া শেষ করেছি। একটি চাকরি জন্য ঢাকায় এসেছিলাম, সেজন্য কোচিংও করেছি। ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন। ঢাকায় থেকে করব কী?। টাকা-পয়সা হাতে নেই। এখন চাকরির আশা বাদ দিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাড়ি যাওয়ার পথে এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো জানালেন যশোরের তরুণ বিল্লাল হোসেন (২৮)।
বিজ্ঞাপন
করোনার সংক্রমণ রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। লকডাউনের খবরে রাজধানীসহ সাভার, ধামরাই এলাকার হাজারো মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছেন। পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় বাড়ছে গাড়ির চাপ। এসব এলাকা থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও সিএনজিযোগে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসছেন যাত্রীরা। দেখে মনে হয় ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
সোমবার (১২ এপ্রিল) পাটুরিয়া ঘাটে দেখা যায়, বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবু ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌ-পথ পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো যানবাহন ও যাত্রীরা। কঠোর লকডাউনের খবরে একদিকে রাজধানী ছেড়ে মানুষ গ্রামে যাচ্ছে অন্যদিকে পাটুরিয়ার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ঢাকামুখি মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, কাভার্ডভ্যান ও অটোরিকশা এবং ভ্যানে কেউ ঘাটে আসছেন আবার কেউ ঢাকায় যাচ্ছেন।
সরেজমিনে আরিচা ঘাটে দেখা যায়, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট ও ট্রলারে করে নগরবাড়ি, কাজিরহাট যাচ্ছে মানুষ। পাটুরিয়া ও আরিচাঘাটে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। কেউ কেউ ব্যবহার করলেও অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে ট্রলারে নদী পার হচ্ছেন যাত্রীরা। এ কারণে ঘাট এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার দুটি ট্রাক টার্মিনালে আড়াইশ পণ্যবাহী ট্রাক নদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকামুখী সড়কের আরসিএল মোড় ছাড়িয়ে গেছে ট্রাকের সারি। পাশাপাশি পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দুই শতাধিক ছোট গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায়।
যশোরগামী বিল্লাহ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়ায় আসার জন্য একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করি। তাতে চালকসহ দুই যাত্রীর ভাড়া দিয়েছি এক হাজার টাকা। যেখানে বাসের ভাড়া দেড়শ টাকা। এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়ি যাইনি কখনো।
ধামরাই এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন ফারুক মোল্লা। ঘাট এলাকায় ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দুদিন পরই লকডাউন শুরু। তাই গ্রামের বাড়ি মাগুরায় যাচ্ছি। সামনে আবার ঈদ। লকডাউনের সময় তো যেতে পারব না। তাই আগেই চলে যাচ্ছি।
পোশাকশ্রমিক মাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক কষ্টে ধামরাই থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এসেছি। বাস চলে না। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছি প্রাইভেটকারে। ভাড়া দিয়েছি ৫০০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজিতে আরও ৫০০ টাকা দিয়ে পাটুরিয়ায় আসলাম। যেখানে ধামরাই থেকে পাটুরিয়া আসতে আগে লাগতো মাত্র ১০০ টাকা।
ঢাকামুখী আবুল বাশার বলেন, তিনদিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে গিয়েছিলাম। আজ ঢাকায় ফিরছি। লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তাই করোনার ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছি। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর রহমান বলেন, লকডাউনের খবরে রোববার সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে দেশের প্রায় ২১ জেলার যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়। করোনার পরিস্থিতি মোবাবিলার জন্য সরকার লকডাউন দিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার যাত্রী আর যানবাহন পারাপার করতে হয় আমাদের।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, এই নৌ-পথে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১৪টি চলছে। হাসনা হেনা, রজনীগন্ধা এবং বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ফেরি বিকল। মেরামতের কাজ চলছে।
সোহেল হোসেন/এএম