সাধারণ মানুষের সেবায় ব্যবহারের জন্য আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সটি উদ্বোধনের পর থেকে ওয়ার্কশপে পড়ে আছে। কিন্তু কেন পড়ে আছে বা গাড়ির কী সমস্যা তা জানে না বগুড়া শহরের ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টার কর্তৃপক্ষ।

আবার হিরো আলমও জানেন না কেন গাড়ি ওয়ার্কশপে। তার দাবি, বাকি থাকা কাজ সম্পন্ন করতেই অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয়, যা আজও মেরামত হয়নি।  

এম মুখলিছুর রহমান নামে হবিগঞ্জের এক শিক্ষক ২০২২ সালে ৩১ জানুয়ারিতে  হিরো আলমকে টয়োটা নোয়াহ ১৯৯৮ মডেলের একটি মাইক্রোবাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে বেশ ঘটা করে উপহারের মাইক্রোবাসটি নিয়ে আসেন হিরো আলম। কিন্তু নিয়ে আসলেও দেখা যায় গাড়িটির কাগজপত্রের মেয়াদসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এরপর গাড়িটিকে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলেন হিরো আলম। ওই সময় তার এমন ঘোষণায় সাড়া দেয় পাশে বগুড়ার ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টার। নিজেদের ওয়ার্কশপে নিয়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে মাইক্রোবাসটি অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

এরপর ঢাকঢোল পিটিয়ে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হিরো আলমের নিজ এলাকা সদর উপজেলার এরুলিয়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় হিরো আলম ঘোষণা দিয়েছিলেন- বগুড়ার কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এটি রাখা হবে। এর মাঝে দুই মাস পেরিয়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্সের খবর অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। হঠাৎ জানা যায় দুস্থ-সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্স নিজেই প্রায় অচলাবস্থায় পড়ে আছে ওয়ার্কশপে।

ডিবিআর অটোমেটিভ কমপ্লিট অটো সেন্টার সূত্রে জানা যায়, মাইক্রোবাসটিকে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করতে অনেকগুলো কাজ করতে হয়েছে। পুরো গাড়ি ডেন্টিং ও পেইন্ট হয়। এখানেই মোটা অংকের খরচ লেগেছে। ভেতরের আসনগুলো অপসারণ করে অ্যাম্বুলেন্সের সিট ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বসাতে হয়েছে। এছাড়া গাড়ির ইঞ্জিন ও চাকাও পরিবর্তন করা হয়েছে।

ডিবিআরের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান দাবি করেন, প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি পুরো সচল করা হয়েছিল। কিন্তু এর কিছু দিন পরেই কোনো কাজের কথা না জানিয়ে হিরো আলম গাড়িটি ওয়ার্কশপে রেখে যান। ওই সময় বলেছিলেন তার লোক এসে কি সমস্যা জানাবে। এরপর আর কেউ আসেনি। হিরো আলমও আর ফোন করেননি। ফোন দিলে রিসিভও করেন না।

তিনি আরও বলেন, ওয়ার্কশপে জায়গা কম। এ জন্য গাড়িটি বাইরে রাখতে হয়েছে। এভাবে পড়ে থাকলে গাড়িটি পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। এই দুই মাসে তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি। এ নিয়ে নিউজ হওয়ার পর তিনি গতকাল আমাকে ফোন দিয়ে দুর্ব্যবহার করেন। হিরো আলম যদি বলতেন গাড়ির কী সমস্যা আছে, তাও আমি মেরামত করতে পারতাম।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, উনি (মিজানুর) মিথ্যা কথা বলছেন। উদ্বোধনের পরের দিন তিনিই গাড়িটি দিয়ে যেতে বলেছিলেন। বাকি থাকা কিছু কাজ সম্পন্ন করে গাড়ি ফেরত দেওয়ার কথা। এরপর আর ফেরত দেননি। আমিও বগুড়ার বাইরে থাকায় গাড়ির আর কোনো খোঁজ নিইনি। দু-চারদিন পর বগুড়ায় আসবো। এসে খোঁজ নেব।

অ্যাম্বুলেন্সের কী কাজ বাকি বা কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী কাজ তার আমি কিছু জানি না। ওই মিজানুর রহমানই জানেন। আর অ্যাম্বুলেন্স করতে কতো খরচ হয়েছে তারও কোনো হিসাব আমার কাছে নেই। আমি জানতেও চাইনি। এটা তিনি করেছেন, তিনিই হিসাব জানেন।  

আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপনির্বাচনে অংশ নেন। সেখানে পরাজিত হওয়ার পর ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন করেন। সেখানেও পরাজিত হন তিনি।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরএআর