হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ থেকে কানাডাগামী বাংলাদেশ বিমানের সিলেটের ৪৫ জন যাত্রীকে ফ্লাইট না দেওয়ার ঘটনায় সিলেটজুড়ে তোলপাড় চলছে। সিলেটের টক অব দ্য টপিকের জন্ম দেওয়া এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল বক্তব্যের পর এটি মানতে নারাজ ফ্লাইটে চড়তে না পারা যাত্রীরা। যাত্রীদের পাসপোর্ট অফলোডের বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন তারা। আর বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে ফায়ার কোড ভায়োলেশন করার কারণেই তাদের যাত্রা বাতিল করার কথা।

কানাডাগামী ফ্লাইটের ৪৫ যাত্রীকে অফলোডের ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার গণমাধ্যমে প্রেরিত বক্তব্যে জানান, বিমানের সিলেট স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ যাত্রীদের ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখতে পান ৪৫ জন যাত্রী একই ব্যক্তির আমন্ত্রণ পত্রের মাধ্যমে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে কানাডা যাচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ডকুমেন্টসমূহ পর্যালোচনা করে সন্দেহ হওয়ায় সিলেট স্টেশন থেকে যাত্রীর ডকুমেন্ট ঢাকাস্থ পাসপোর্ট কন্ট্রোল ইউনিটে (পিসিইউ) পাঠানো হয়।

উক্ত ইউনিট ডকুমেন্টসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দিল্লিস্থ কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির (সিবিএসএ) কাছে পাঠালে প্রথমে তারা জানায় সিবিএসএ এর সিস্টেমে যাত্রীর তালিকায় যাত্রীর তথ্য সঠিক রয়েছে। ফলে সিলেট থেকে যাত্রীদেরকে বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করা হয় এবং যাত্রীগণ ঢাকায় পৌঁছান। ইতোমধ্যে কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি থেকে আবার জানানো হয় যাত্রীদের আমন্ত্রণ পত্রের তথ্যের সঙ্গে থাকার (আবাসন) বিষয়ে সিস্টেমে গরমিল রয়েছে। যাত্রীদের আমন্ত্রণপত্রে হোটেলে থাকার কথা থাকলেও যাত্রীদের কাছে ভাড়া বাসার ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। কানাডিয়ান আইন অনুযায়ী একটি রেন্টেড হাউজে ৪৫ জন যাত্রী থাকার কোনো নিয়ম নেই এবং তা Fire code violation বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

পরে যাত্রীদের ডকুমেন্টসমূহ ও কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির বার্তা পর্যালোচনা এবং ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ৪৫ জন যাত্রীকে ৭ নভেম্বর টরন্টো ফ্লাইট থেকে অফলোড করা হয়। 

তিনি আরও জানান, ঢাকাস্থ পাসপোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) এর মাধ্যমে যাত্রীবৃন্দের তথ্যাদি সিবিএসএ এর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সিবিএসএ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে উল্লিখিত যাত্রীদের ভিসা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের পর সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের ইমেইলে সিদ্ধান্ত জানাবে।

এ ঘটনার পর যাত্রীদেরকে হোটেল অফার করা হলে তারা হোটেলে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টরন্টো ফ্লাইটে না পাঠানোর বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হলে তারা বিষয়টি অনুধাবন করেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন থেকে তাদের বহির্গমন সিল বাতিল করে ব্যাগেজ বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং যাত্রীগণ নিজেদের মতো এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন।

তিনি আরও জানান, যাত্রীর কাছে যথাযথ ডকুমেন্ট না থাকলে বা এ ধরনের ভায়োলেশনের জন্য কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যাত্রীপ্রতি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে ৩২০০-২০,০০০ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করতে পারে।

বিমান কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের পর উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাই আমরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।আমাদের সবকিছুই ঠিক ছিল। ভিসা টিকিট হোটেল রিজার্ভেশনসহ সব। তারপরও তারা কোন কারণে আমাদের ফ্লাইট বাতিল করলো তা আমার বোধগম্য নয়।

এসময় তিনি আরও জানান, আমরা সিলেটে বোর্ডিং পাস নিয়েছি, ইমিগ্রেশন পর্ব শেষ করেছি। ঢাকায় যাওয়ার পর বিমান কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে বোর্ডিং পাস চায়। আমরা বোর্ডিং পাস দেওয়ার পর থেকেই তারা নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করে। তারা আমাদের হোটেল বুকিংসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখতে চায়। আমরা সেগুলোও তাদেরকে দেখাই।

বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে একটি বাসায় ৪৫ জন অবস্থানে ফায়ার কোডের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ভুল বক্তব্য। আমরা তিনটি বাসা বুকিং করেছিলাম। একটি বাসা হবে কেন? তারা বিমানবন্দরে বলেছিল আমাদের হোটেল বুকিং থাকার কথা আমরা হাউজ বুকিং করলাম কেন? সাথে সাথে আমরা কানাডায় কথা বলে হোটেল বুকিং কপি তাদেরকে দেখাই কিন্তু তারা আমাদেরকে কোনো সহযোগিতা করেননি।

বিষয়টি নিয়ে আরেক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাইনা। যদি সময় সুযোগ পাই তবে আমি আপনাকে বিস্তারিত জানাবো।

মাসুদ আহমদ রনি/এমএএস