কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর, জেলা জজের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর, এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাইয়ের দায়ের করা মামলা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে প্রায় দুই বছর ধরে শহরের চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের পাশাপাশি উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও দৃষ্টিনন্দন ফুটপাতসহ সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন কাজও শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দেন-দরবারেই সময়ক্ষেপণ হচ্ছে সড়ক বিভাগের। তবে এ সমস্যার সমাধান মিলছে না। 

এতে করে শহরের ব্যস্ততম রাস্তার কাজ বন্ধ থাকায় ও খানাখন্দে ভরা রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহন চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পথচারী ও স্থানীয়রা।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বটতৈল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুর গেট এবং মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত মোট ১০ কিলোমিটার দুই লেন সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। এই কাজ দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জহিরুল লিমিটেড বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারে ১৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কার্যাদেশ পায়। আর স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড মজমপুর থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারে ১৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্যাদেশ পায়।

তারা আরও জানান, সড়কের দুপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত নির্মাণ ও ডিভাইডারে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনও এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। ২০২২ সালের জুনে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরেও কাজ শেষ না হওয়ায় ফের চলতি (২০২৩ সাল) বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নানা জটিলতায় থমকে থাকায় বর্ধিত মেয়াদেও কাজটি শেষ হবে না।

পথচারী, যানবাহন চালক ও স্থানীয়রা জানান, চার লেনের কাজ সম্পন্ন না করে রাস্তা খুড়ে ফেলে রেখেছে। খানাখন্দভরা রাস্তায় চরম ভোগান্তি হয়। রোদের সময় ধুলো আর বৃষ্টি হলেই কাদা পানিতে চলাফেরা করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এসডিই লিটন আহম্মেদ খান জানান, জেলা জজ তার বাসভবনের সীমানা প্রাচীর ভাঙার অনুমতি দিলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ সুপারের অফিসের সীমানা প্রাচীর। জমিটির মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এটির সমাধান হতে পারে, তবে কবে হবে সেই বৈঠক তা জানাতে পারেননি তিনি।

অন্যদিকে বটতৈল থেকে মজমপুর গেট এলাকার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরীর সামনে এক কিলোমিটার জমির মালিকানা দাবির মামলা। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হকের ভাই মাহাবুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

অবশ্য মাহাবুল জমিটি নিজের বলে দাবি করে মামলা করলেও কলকাঠি নাড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল হক। তবে জমিটি তাদের নয়, জমিটি জেলা পরিষদের। মামলার কারণে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের এক কিলোমিটার অংশের সড়ক ও ড্রেনের কাজ এখনও শেষ করা যায়নি।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, জমিটি আমাদের ক্রয় করা সম্পত্তি। যার কারণে আমরা মামলা করেছি। উচ্চ আদালতে মামলার বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য স্থানীয়ভাবে বসা হয়েছিল, কিন্তু সমাধান হয়নি।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান জানান, দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা দেয়াল ও একটি মামলার কারণে চার লেন সড়কের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। জমি বুঝে না পাওয়ায় ড্রেনের পাশাপাশি সড়কের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলো সমাধানের জন্য কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হলে এ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।

রাজু আহমেদ/টিএম