আশ্রয়ণ প্রকল্প
নতুন ঘর পেয়ে ঘরে ঘরে আনন্দ
‘নদীগর্ভে আমার সব শেষ গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরাজীর্ণ ব্যারাক থেকে একক গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন। আমি সেই ঘরের পাশে পেয়ারা গাছ রোপণ করেছি। গাছের প্রথম ফল প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাই। তিনি আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন। আমরা সারা জীবন উনার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের আবদুল্যা মিয়ার হাটের নলুয়া গ্রামের আশ্রয়ণের বাসিন্দা আবদুল মান্নান (৫৫)।
বিজ্ঞাপন
আবদুল মান্নানের জন্মস্থান দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। হাতিয়ায় নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারা হয়ে জরাজীর্ণ ব্যারাকে কয়েক পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতেন তিনি। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় আবদুল মান্নানসহ একশ পরিবার পেয়েছেন একক ঘর। একটি ঘর যেন তাদের একটি ইতিহাস।
নিজের ঘরের সামনে ফুল গাছ লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন করেছেন বাসিন্দা কাজলী বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা গৃহহীন ছিলাম, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছেন। আমরা অনেক কষ্টে ছিলাম। কখনো বলে বুঝানো যাবে না। আমরা সেই ঘরকে ফুল ও ফল গাছ লাগিয়ে সাজিয়েছি। যেন দেখতে আরও সুন্দর লাগে। আমাদের পাকা এরকম ঘর হবে কখনো কল্পনাও করিনি।
আবুল কাশেম নামের আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে আমরা জরাজীর্ণ ব্যারাকে ছিলাম। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী আমাদের একক পাকা ঘর দিয়েছেন। আমরা সেই ঘরে থাকতে পারা আমাদের স্বপ্নের মতো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা গৃহহীন ছিলাম। পাকা ঘর আমাদের কাছে স্বপ্ন। আমরা সব সময় প্রধানমন্ত্রীর জন্য হাত তুলে দোয়া করি। আল্লাহ যেন উনাকে আবারও ক্ষমতায় রাখেন। তিনি আমাদের পাশে সব সময় থাকবেন।
আমেনা বেগম নামে আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাঙা ঘরে অনেক কষ্ট করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা পাকাঘর দিয়েছেন। সেখানে রান্নাঘর, টয়লেট ও থাকার ঘর আছে। প্রধানমন্ত্রীকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সালাম জানাই।
ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামাল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে যে ঘরগুলো দেওয়া হয়েছে এতে আমাদের এলাকার মানোন্নয়ন হয়েছে। সবার মাঝে খুব আনন্দ বিরাজ করছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা নৌকার পক্ষে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এই এলাকার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখায় আমরা উনার কাছে কৃতজ্ঞ। এই ইউনিয়নের লোকজন আমরা অনেক খুশী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ বোরহান উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘরের ভিত্তি থেকে শুরু করে রং পর্যন্ত খুব ভালোভাবে করেছি, যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে এবং অনেকদিন যাবত যেন ঘরে কোনো সমস্যা না হয়। ঘরের মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
কবিরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নলুয়া ভূইয়ারহাটে উপহারের ১০০ ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা অনেক সুন্দরভাবে ঘরগুলো তৈরির চেষ্টা করেছি। সেখানে যারা থাকতেন তারা টিনশেড ব্যারাকে ছিল। এতে চার পরিবার একসঙ্গে থাকত। বর্তমানে সবার জন্য একক ঘর নির্মাণ করা দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে সবজি বাগান ও ফল-ফলাদির গাছ রোপণ করেছে। আমরাও তাদের ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ দিয়েছি। তারা হাঁস-মুরগি পালন করছে, মাছ চাষ করছে। আমরা তাদের নিয়মিত উৎসাহ দিচ্ছি। তারা যেন স্বনির্ভর হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ এবং সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করতে পারে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। উপজেলা প্রশাসন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করছে এবং কাজ করে যাবে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ছিল একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সে লক্ষ্যে সারা দেশে প্রত্যেক গৃহহীনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘর করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তার অংশ হিসেবে আমরা নোয়াখালী জেলায় প্রায় চার হাজার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই মানুষগুলোর এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে। এসব মানুষ রাস্তার পাশে, মানুষের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। আমরা বেদে সম্প্রদায়, ভিক্ষুককে এই আশ্রয়ণের ঘর উপহার দিয়েছি। তারা সবাই নিজেদের ঘরগুলো আপনমনে সাজিয়েছেন। আমরা চাই প্রত্যেক ভূমিহীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনুযায়ী যেন একটা নিরাপদ আবাসস্থল পায়, সেই লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
হাসিব আল আমিন/এমজেইউ