বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিও আছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে জেলা ছাত্রলীগ ও পদবঞ্চিত বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন সারা দেশে অবরোধ ও নৈরাজ্যে শিক্ষাজীবন বিঘ্নিতের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয় জেলা ছাত্রলীগ।

সংঘর্ষের এক পক্ষে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা রয়েছেন। অপর পক্ষে আছে কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া বিদ্রোহী অংশ।

সংঘর্ষে কয়েকজন আহতের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব সাহা, আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সিহাব, লিটন, সৈকত, শুভসহ আরও তিন থেকে চার কর্মী। এছাড়া বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা মাহফুজার রহমানও আহত হন।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজিব সাহা মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে প্রত্যেক কলেজ ক্যাম্পাসে আজ বিক্ষোভ মিছিল ছিল। এজন্য আমরা আজিজুল হক কলেজে মিছিল শেষে সমাবেশ শুরু করি। এ সময় তৌহিদ, মাহফুজারের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল এসে অতর্কিত হামলা করে। ওরা আমাদের দুই-চারজন ছেলের ওপর যখন হামলা করে, তখন আমি এগিয়ে গেলে আমার হাতেও আঘাত লাগে। পরে আমাদের ছেলেরা একত্রিত হয়ে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় আমার কব্জি ফুলে গেছে। এজন্য চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছি।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিজেও আহত হয়েছি। এখন কথা বলতে পারছি না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজ ছাত্রলীগ শাখার আয়োজনে ক্যাম্পাসে আজ বিক্ষোভ মিছিল ছিল। এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে একটি দল অংশ নেয়। তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে ছাত্রলীগের স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে সমাবেশে বক্তব্য শুরু করেন সভাপতি সজিব সাহা। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের সমাবেশের খবর পেয়ে তৌহিদ, মাহফুজারের নেতৃত্বে একটি দল লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে বক্তব্য শুরু হলে সমাবেশে এসে তারা হামলা করে। হামলায় এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন তারা। এদিন সকাল থেকেই কলেজে পুলিশের একটি দল উপস্থিত থাকলেও তারা ঘটনাস্থলের পাশে নীরবে অবস্থান করছিল।

পরে বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। কলেজের উত্তর পাশের ক্যান্টিন এলাকায় সংঘর্ষ ঘটে। এ নিয়ে কলেজে উত্তেজনা ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানাধীন স্টেডিয়াম ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলেজে বিশৃঙ্খলার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এখন কলেজের পরিবেশ শান্ত আছে।

তবে সংঘর্ষের বিষয়ে এই কর্মকর্তা কিছু বলতে পারেননি। মমিনুল ইসলাম বলেন, আসলে কি হয়েছে তা এখন বলতে পারছি না। আমরা তদন্ত করবো। তারপর বলতে পারব। এ ঘটনায় কেউ আটক নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনাটি কাদের মধ্যে হয়েছে তা বলতে পারছেন না সরকারি আজিজুল হক কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. মো. সবুর উদ্দিন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে আমরা মিটিংয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে হৈচৈ শুনে বের হই। বের হয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ দেখি। তবে আমি তাদের চিনি না। তারা কোন সংগঠন করেন তাও জানি না। পরে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ নভেম্বর সজীব সাহাকে সভাপতি ও আল-মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা চিঠিতে এক বছর মেয়াদি এই আংশিক কমিটি অনুমোদন পায়।

কিন্তু কমিটি ঘোষণার পরপরই জেলা ছাত্রলীগের একাংশ বিক্ষোভ শুরু করে। এদের মধ্যে তৌহিদুর রহমান ও মাহফুজার রহমান অন্যতম। কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে এই ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে তখন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছিল সংগঠনটির একাংশ।
এরপর থেকে জেলায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিগত সময়ে একাধিকবার সংঘর্ষ ঘটেছে।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এমজেইউ