গাজীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে মজুরি বোর্ড। ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে। 

বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল ৭টার পর থেকে কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকার মজুরি বোর্ডের ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান ও বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা। এ ঘটনায় এক নারী ও পুরুষসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। ৭ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রস্তাব করে মজুরি বোর্ড। পরে মজুরি বোর্ড ঘোষিত বেতন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শ্রমিকরা। 

প্রতিদিনের মতই বুধবার সকাল থেকে কোনাবাড়ি এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস ও বেস্টঅল সোয়েটারসহ আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করলে কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল ৮টার দিকে কয়েক শ শ্রমিক কাশিমপুরের জরুন মোড়ের সামনে একত্রিত হয়ে হাতে ইট এবং লাঠি সোঁটা নিয়ে মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেটের হয়ে হাতিমারার দিকে এগিয়ে যায়।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, শ্রমিকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ারসেল ছুড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন করে। বেশির ভাগ কারখানায় কাজ চলছে এবং তারা উৎপাদন করছে। আমরা তাদের ঘোষণা দিয়েছিলাম আপনারা নিজেদের জায়গায় থাকেন, আপনাদের ফ্যাক্টরিতে ঢুকেন, কাজ পছন্দ না হলে কাজ বন্ধ রাখেন কিন্তু অন্য কোনো কারখানায় ভাঙচুর করতে যাবেন না। অন্য কোনো কারখানার শ্রমিকদের নামাতে যাবেন না। কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা না শুনে অন্য কারখানার শ্রমিকদের নামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

শিহাব খান/এএএ