ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রম করে পড়ালেখা করছেন সাদিয়া সুলতানা শান্তা (১৮)। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছেন তিনি। রাজবাড়ী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে বই কিনতে পারছিলেন না শান্তা। 

বিষয়টি রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ও সদ্য পদন্নোতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানার পর তিনি শান্তার একাদশ শ্রেণির সব বই কিনে দেন এবং সাদিয়ার প্রাইভেট পড়ারও ব্যবস্থা করে দেন। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম সাদিয়ার হাতে একাদশ শ্রেণির বইগুলো তুলে দেন।

সাদিয়া সুলতানা শান্তা রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের মো.আব্দুস সাত্তার ব্যাপারী ও সাগরিকা বেগম দম্পতির মেয়ে। তিন ভাই বোনের মধ্যে সাদিয়া বড়। সাদিয়ার এক ভাই সপ্তম শ্রেণিতে ও আরেক ভাই তৃতীয় শ্রেণিতে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ে। সাদিয়ার বাবা কৃষিকাজ করে ও মা গৃহিণী। রিকশা চালিয়ে সাদিয়ার বাবা সংসার চালায়।

ছোটবেলা থেকেই অদম্য মেধাবী সাদিয়া। সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যেও সাদিয়া তার পড়ালেখা চালিয়া যাচ্ছেন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তারপর বাসে চড়ে প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ক্লাস করতে হতো তাকে। অদম্য মেধাবি হওয়ায় চলতি বছরে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। 

এরপর তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু টাকার অভাবে বই কিনতে পারছিলেন না শান্তা। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে বিষয়টি রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ও সদ্য পদন্নোতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বিষয়টি জানার পর সাদিয়াকে তিনি একাদশ শ্রেণির সব বই কিনে দেন এবং তাকে প্রাইভেট পড়ারও ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও সাদিয়ার পড়ালেখার ব্যাপারে সকল সহয়তা করার আশ্বাস দেন।

সাদিয়ার মা সাগরিকা বেগম বলেন, আমার তিনটি সন্তান লেখাপড়া করে। ওদের বাবা রিকশা চালায়। অল্প একটু জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করি ও বাড়িতে হাঁসমুরগি পালন করি। এসব দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে আমাদের। কষ্ট করে পড়ে রাতদিন পরিশ্রম করে সাদিয়া এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে। পরে রাজবাড়ী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। ভর্তি হবার পর টাকার অভাবে তার বই কিনে দিতে পারছিলাম না। বিষয়টি অনেকে জেনেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বিষয়টি জানার পর তিনি সাদিয়াকে বই কিনে দেন এবং সাদিয়ার পড়ালেখার ব্যাপারে সকল সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। আমার মেয়ের পাশে দাঁড়ানোই আমরা স্যারের নিকট কৃতজ্ঞ।

সাদিয়া সুলতানা শান্তা বলেন, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বিনাচিকিৎসায় তার দাদার মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই তার চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু তার পড়ালেখা চালিয়া যাওয়ার মতো সামর্থ্য বাবার নেই। টাকার অভাবে এসএসসি পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পাইনি। বাড়িতে নিজে নিজে পড়েই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। 

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ও সদ্য পদন্নোতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একদিন দেখলাম অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা শান্তার অর্থের অভাবে পড়ালেখা শঙ্কার মুখে পড়েছে। ছোট বেলায় আমিও খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি তাই আমি জানি এই পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা অসহায় হয়। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়াকে সাহায্য করা উচিত। নিজের যেহেতু সামর্থ্য রয়েছে সেই জায়গা থেকেই সাদিয়ার পাশে দাঁড়ানো। আমি সাদিয়ার পাশে আছি এবং পাশে থাকবো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়া পর্যন্ত আমি তার পাশে থাকবো।

মীর সামসুজ্জামান/এমএএস