লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন
একাই অর্ধশত ব্যালটে নৌকায় সিল মারলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে শূন্যপদে উপনির্বাচনে ব্যালট বইয়ের প্রায় অর্ধশত পাতায় নৌকায় মার্কায় সিল মারার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার (৫ নভেম্বর) ভোট চলাকালে চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজাদ হোসেন সিল মারেন। এতে নৌকার প্রার্থীর আরেক কর্মী তাকে সহযোগিতা করেন। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে নৌকা প্রতীকের একটি গান জুড়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজাদ নির্বাচনী এলাকার সদর উপজেলা দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। ভিডিওতে তার গলায় নৌকার কার্ডও ঝুলতে দেখা যায়। ভোটকক্ষের বেঞ্চে বসে একটি ব্যালট বইয়ের পাতা উল্টিয়ে একাধিক সিল মারেন আজাদ। ভিডিওতে দেখা গেছে খুব দ্রুত তিনি সিল মারছেন। এ সময় তাকে অন্য একজন তাকে সহযোগিতা করেন। ভিডিওটিতে দেখা যায় ৪৩টি ব্যালটে তিনি নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছেন।
আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। গত ৮ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ।
চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আজাদ হোসেন বলেন, আমার ভোট দিয়েই আমি কেন্দ্র থেকে চলে এসেছি। ভিডিওর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ভিডিওটি দেখলে বলতে পারবো। তবে নৌকা মার্কায় অনেকগুলো সিল মারার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সম্প্রতি আজাদকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই সে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরেছে। এরা দলের জন্য বিপজ্জনক। তবে ভিডিওটি আমি দেখিনি। বিস্তারিত কিছু জানা নেই।
লাঙলের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাকিব হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্রে প্রভাব খাটিয়ে জাল ভোট দিয়েছেন। নৌকায় সিল মারার ভিডিওটি তার বড় প্রমাণ। জালভোটসহ বিভিন্ন অভিযোগে আমি নির্বাচন চলাকালীন ভোট বর্জন করেছি। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ভিডিওটি আমার নজরে পড়েনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে কেউ যদি অভিযোগ দেন তাহলে ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। আর ইতোমধ্যে আমরা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু। এছাড়া লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ রাকিব হোসেন ৩ হাজার ৮৪৬ ভোট, গোলাপ ফুল মার্কার প্রার্থী সামছুল করিম খোকন ২ হাজার ১২৬ ভোট ও আম প্রতীকে সেলিম মাহমুদ পেয়েছেন ৫১৩ ভোট। তবে নির্বাচনে জাল ভোট, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনদের বল প্রয়োগ, কেন্দ্র এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়া ও এজেন্টদেরকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে রোববার দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর