সোনামসজিদ-বেনাপোল স্থলবন্দরের সড়ক হবে ৬ লেন, কমবে পরিবহন খরচ
দেশের দুই স্থলবন্দরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ছয় লেন সড়ক তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এই ছয় লেন সড়ক তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে যশোরের বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য সহজে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠনোর পাশাপাশি কমে আসবে পরিবহন ব্যয়।
ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর এবং আঞ্চলিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (উই কেয়ার) প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে প্রকল্প দুটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের দুই স্থলবন্দরে যোগাযোগের জন্য সংকুচিত রাস্তায় পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য সময় এবং পরিবহন খরচ বাড়ে বহুগুণে। এতে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে সহজে আমদানি-রপ্তানি পণ্য রাজধানীসহ বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো সহজ হবে, কমে আসবে পরিবহন ব্যয়।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি ভারত ভ্রমণ করেন হাজারো মানুষ। স্থল বাণিজ্যের অন্তত ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয় এই বন্দর দিয়ে। উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানির জন্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই বন্দর দিয়ে ফল, কয়লা, পাথর, মসলা ও কৃষি পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি যাত্রী পারাপারেও দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বন্দরটি। তবে দেশের এই দুই স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সংকীর্ণ। অপ্রশস্ত সড়কের কারণে দ্রুত গতিতে পণ্য আনা-নেওয়ায় বেগ পেতে হয় ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, নাটোরের বনপাড়া বাইপাস থেকে পাবনা, কুষ্টিয়া হয়ে ঝিনাইদহ পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার সড়কের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বনপাড়া বাইপাস থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত ১৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরে যাতায়াতের জন্য গেটওয়ে উত্তরের জেলা নাটোর। ছয় লেনের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কৃষিপ্রধান উত্তরের জেলাগুলো। সহজেই এই জেলা থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসাও জমজমাট হবে বলে আশা ব্যবসায়ী নেতাদের।
নাটোর সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার বলেন, নাটোর জেলার সঙ্গে দুটি স্থলবন্দরের সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের দুটি ভিন্ন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ব্যাপকভাবে আমাদের সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি যোগাযোগ ভালো হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কটি ছয় লেনের করতে ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এনিয়ে মিটিংও হয়েছে। আমরা আশা করি এটা অতি দ্রুত অনুমোদন পাবে।
নাটোর বিসিক শিল্প মালিক সমিতি সভাপতি প্রদীপ কুমার আগারওয়াল বলেন, কম খরচে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে পারবো। পণ্যের মূল্য যদি বেশি আসে তাহলে কৃষকদের বেশি মূল্য দিতে পারবো। পক্ষান্তরে কৃষকরা উপকৃত হবেন। এই রাস্তা ছয় লেনে উত্তীর্ণ হলে আমাদের উত্তরবঙ্গের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ছয় লেনের সড়কের বিষয়টি শুনেছি। এটা প্লানিং পর্যায়ে আছে। সম্ভবত ২০২৫ সালের দিকে হবে। ছয় লেন সড়ক আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি। পাশাপাশি রেলপথ উন্নয়ন দরকার। চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে এই অঞ্চলের মানুষকে ভারত যেতে যশোর যেতে হয়। এই সড়ক ছয় লেনের হলে ব্যবসায় গতি আসবে। গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। অর্থনীতিতে গতি আসবে। একই সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শাহিনুল আশিক/আরএআর