‘আমার বাবা কবরে চলে গেছে, বাবা বলছিল আমার সোনা মনিকে খাওয়াইও আর দেইখ্যা রাইখো। আমাকে বাবা অনেক আদর করতো, বাবার অনেক কথা আমার মনে পড়ছে। আমাকে সোনা বলতো, পাখি বলতো, সোনামণি বলে ডাকতো, ডিউটি থেকে আসার সময় আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতো। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার। এখন আমাকে কেউ সোনাপাখি বলে ডাকবে না।’

এভাবেই বাবার কথা স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল ঢাকায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের সাত বছর বয়সী মেয়ে তানহা আক্তার। 

নিহত আমিরুল ইসলাম পারভেজের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের চরকাটারি গ্রামে। রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উপজেলার সরকারি প্রমোদা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তার মরদেহ বহন করা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে আসে। এরপরই নিহত আমিরুলের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরাসহ স্থানীয় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আমিরুলের ছোট ভাই বিপ্লব, বোন সেলিনা হাওমাও করে কান্না করতে থাকেন।

নিহত আমিরুলের ছোট ভাই আজিজুল হক বড় ভাইকে হারিয়ে প্রায় পাগল হয়ে গেছেন। ‘আমার ভাই কই, ওই ভাই তুই তো আর আইলি না, তোর জন্য ইলিশ মাছ কিনছি আমি, তুই আসেক পিঠা খামু, তুই আয়’ এভাবেই তিনি বিলাপ করছিলেন। 

মরদেহের পাশে বসে নির্বাক হয়ে শেষবারে মতো আমিরুলের চেহারাটি দেখছেন মা রহিমা আক্তার। বৃদ্ধ মায়ের সামনে ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। ‘ও বাবা, বাবা তোমারে মাইলা ফালাইছে, ও বাবা তুমি কই গেলা’ এসব বলে বলে বৃদ্ধা মা বিলাপ করছিলেন। একই অবস্থা আমিরুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লারও।

বিকেলে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের জানাজার আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর বাদ মাগরিব নিহত আমিরুলের জানাজা শেষে উপজেলা সদর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন কনস্টেবল আমিরুল। আপনারা জানেন, গতকাল ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত নৃশংস অত্যাচার করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীরা আহত হয়েছেন। 

দুর্জয় বলেন, প্রাথমিকভাবে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করেছি। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, তাদের আবাসস্থল পুনর্বাসনের জন্য। আমরা সেটি অবশ্যই করবো। যেহেতু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমিরুল। তার পরিবারের কেউ যদি চাকরি করার মতো থাকে তাহলে আমার পক্ষ থেকে সেটির ব্যবস্থা করা হবে। এ ছড়াও তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও আলাপ করবো। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা তার ব্যাপারে সহযোগিতা পাবো। নিহতের ছোট মেয়ের লেখাপড়াসহ সকল সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দেন তিনি। 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, মানুষের জীবন, সম্পত্তি, রাষ্ট্রের সম্পদ-সম্পত্তি রক্ষা করা পুলিশের প্রধান দায়িত্ব। জনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের পুলিশ সদস্য আমিরুল শহীদ হয়েছেন। 

তিনি বলেন, এই ঘৃন্যতম কাজের জন্য আমরা ধিক্কার জানাই, তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। তার পরিবারের উপার্জন বা কর্মসংস্থানের বিষয়ে ইতোমধ্যে আমাদের আইজিপি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। নিহতের স্ত্রীর বা তার পরিবারের অন্য কাউকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটা কর্মসংস্থান করে দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।  

আরএআর