হাসপাতালের বিলের বিনিময়ে নবজাতককে দিয়ে দিলেন নানা
সিজারিয়ান অপারেশনের পর নবজাতকের বিনিময়ে নার্সিং হোমের বিল পরিশোধ করেছেন অসহায় এক নানা। এখন নবজাতককে ফিরে পেতে চান নিরুপায় মা।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরের ফরিদপুর গ্রামে কথা হয় ওই নবজাতকের মা শিরিন আক্তারের (২০) সঙ্গে। শিরিন আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার মনিকুরা গ্রামে। তিনি মা-বাবার সঙ্গে শ্রীপুরের ফরিদপুর গ্রামে ভাড়া থাকেন। তার আবু জাহিদ নামে দেড় বছর বয়সী আরও এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শিরিনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার স্বামী আরিফুল ইসলাম বিভিন্ন পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ করেন। তিনি মাদকাসক্ত। বিভিন্ন সময় তাকে মাদক ছাড়তে অনুরোধ করার পরও তিনি মাদক না ছাড়ায় ৪ থেকে ৫ মাস আগে তার স্ত্রী শিরিন তাকে ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এরপর থেকে স্বামীর সঙ্গে শিরিনের কোনো যোগাযোগ নেই।
গত ১৬ অক্টোবর গর্ভবতী শিরিন আক্তারকে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকার স্বাধীন নার্সিং হোমে ভর্তি করান তার বাবা সিরাজুল ইসলাম। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিরিন একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
শিরিন আক্তারের বাবা সিরাজুল ইসলাম একটি স’মিলের মিস্ত্রি। বাড়তি আয় করতে মাঝে মধ্যে অটোরিকশাও চালান। তিনি বলেন, স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকেই মেয়ে আমাদের কাছে থাকে। মেয়েকে নিয়ে মাথায় বাড়তি চাপ ছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে শামসুন্নাহার নামের প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে পরামর্শ করি। ওই নারী আমার মেয়ের সিজারিয়ান অপারেশন করতে ১৩ হাজার টাকায় ময়মনসিংহের স্বাধীন নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করিয়ে দেয়। গত ১৬ অক্টোবর মেয়েকে ওই নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, গত ১৯ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার দিন আমাদের জানানো হয়, হাসপাতালে বিল ২৪ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। তখন আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। তারা আমাকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। তবে ওই সময় আমার কাছে শুধু ১৩ হাজার টাকা ছিল।
এক পর্যায়ে শামসুন্নাহার নবজাতককে দত্তক দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সন্তান দত্তক দিলে হাসপাতালে বিল পরিশোধ করে নগদ কিছু টাকাও দেওয়া হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি করা অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে তখন আমার নাতিকে শামসুন্নাহার ও আল-আমিন নামে এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেই। এরপর থেকেই আমার মেয়ে তার ছেলের জন্য শুধুই কেঁদে যাচ্ছে। নবজাতককে ফিরিয়ে আনতে গেলে তারা এখন ৭০ হাজার টাকা দাবি করছেন। শামসুন্নাহার বলেছে এ টাকা না দিলে নবজাতককে ফেরত পাব না। কিন্তু তাদের দাবি করা টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।
হাসপাতালের বিলের টাকা পরিশোধ করে দিলে সন্তান ফিরিয়ে দেবে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে নবজাতকের নানা বলেন, আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা আছে। বিল অনুযায়ী টাকা জোগাড় করে নবজাতককে ফিরিয়ে আনার কথা তাদের জানালে, তারা ৭০ হাজার টাকা দাবি করছে।
নবজাতকের মা শিরিন আক্তার বলেন, নার্সিং হোম থেকে ছুটির দিন দুপুরে শামসুন্নাহার আমাকে ডেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমি ছেলেকে নার্সিং হোমের বেডে রেখে সেখানে গেলে তারা আমার হাতে ওষুধের জন্য ১৫০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। আমি তখনও বুঝতে পারিনি যে আমার ছেলেকে তারা নিয়ে যাবে। আমি ফিরে এসে দেখি বেডে আমার ছেলে নেই। শেষবারের মতো আমার সন্তানকে তারা দেখতেও দিল না। এখন আমি আমার সন্তানকে ফেরত চাই।
এ বিষয়ে শামসুন্নাহার বলেন, প্রথমে ১৩ হাজার টাকা চুক্তি থাকলেও অপারেশনে কিছু জটিলতা ছিল। তাই নার্সিং হোম বিল বাড়িয়ে দেয়। আর পরিবারটি বিল দিতে না পারায় তারা আল-আমিনের কাছে নবজাতককে তুলে দেয়। আল-আমিন বিল দিয়ে নবজাতককে নিয়ে যায়। তবে নবজাতক এখন কোথায় রয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
আল-আমিন নামের ওই ব্যক্তির কোনো তথ্য না মেলায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে স্বাধীন নার্সিং হোমের পরিচালক মো. খোকন বলেন, শিরিন নামের ওই নারীর একটি পুত্র সন্তান হয়। পূর্ব থেকে তাদের কত টাকা চুক্তি ছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে হাসপাতালের বিল হয়েছিল ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। যা পরিশোধ করার পর তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বিল কে দিয়েছে আর নবজাতককে কি করেছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের কেউ এখন পর্যন্ত জানায়নি। আমার কাছে যদি পরিবারটি সহায়তার জন্য আসে অবশ্যই তাদের যথাযথ সহায়তা করা হবে।
শিহাব খান/আরকে