গাজীপুরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিক অসন্তোষে বর্তমানে মৌচাক, কোনাবাড়ি ও চন্দ্রাসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

শিল্প পুলিশ ও আন্দোলনরত কারখানার শ্রমিকরা জানান, বেতন বাড়ানোর দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, তেলিচালা, মৌচাক, শফিপুর, চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মৌচাক এলাকা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরে শ্রমিকরা মৌচাক এলাকা থেকে বিক্ষোভ করতে করতে চন্দ্রার দিকে যায়। যাওয়ার পথে উপজেলার পল্লী বিদুৎ এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর থেমে থাকা একটি জিপ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ ছাড়া শ্রমিকরা আশপাশে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেনি, সেসব কারখানা বন্ধ করার জন্য আন্দোলন ও মিছিল করে শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় কয়েকটি ভবনের গ্লাস ভাঙচুর করে। এছাড়া শ্রমিকরা লাসানিয়া নামের একটি রেস্টুরেন্ট, চন্দ্রা এলাকার ব্যাংক এশিয়ার এটিএম বুথে ভাঙচুর করে এবং পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকার আশপাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে।

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করছেন। আজ সকালে শ্রমিক বিক্ষোভে কোনাবাড়ী থেকে সফিপুর পুরো পাঁচ কিলোমিটার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। পরে শ্রমিকরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ অ্যাকশনে যায়।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, উত্তেজিত শ্রমিকরা গাড়িতে আগুন দেওয়ার খবরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই আগুনে গাড়িটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়।

গাজীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. সুলতান উদ্দিন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে আমাদের ৫০ থেকে ৬০টিরও অধিক বাস ভাঙচুর করেছে শ্রমিকরা। মুঠোফোনে অনেকেই বাস ভাঙচুরের খবর জানিয়েছেন। বাসগুলো স্ট্যান্ডে এলে প্রকৃত সংখ্যা বলা যাবে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত তিন দিনের মতো আজও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এর নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কয়েক দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় প্রতিটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি জিপ গাড়িতে শ্রমিকরা আগুন দেয়। তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে সকাল থেকেই বিক্ষোভ করে। এতে সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা, মহানগর ও শিল্প পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

শিহাব খান/এমজেইউ