ঘূর্ণিঝড় হামুনকে ঘিরে নোয়াখালীর উপকূলজুড়ে সাত নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এতে নোয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন। দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সঙ্গে সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নোয়াখালীর অন্য কোথাও থেকে লোকজন হাতিয়ায় আসতে পারছেন না এবং হাতিয়া থেকে কেউ দ্বীপের নোয়াখালীতে যেতে পারছেন না। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ না এলেও আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট এলাকায় মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করলেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী। এছাড়াও বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনদের নিরাপদ স্থানে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

এসময় সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের কারও হাত নাই। আমাদের দরকার সচেতনতা আর সময় অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। কেউ হেলাফেলা করবেন না। রাত আটটার মধ্যে নিকটস্থ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাবেন। সেখানে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

সুরাইয়া আক্তার লাকী আরও বলেন, হামুন মোকাবিলায় হাতিয়াতে ২৪২টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৩০টি উঁচু স্থাপনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মানুষের জানমাল রক্ষায় গতকাল সোমবার থেকেই হাতিয়া-বয়ারচর চেয়ারম্যান ঘাট সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। সব নৌযানকে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনারা নির্ধারিত সময়ের আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসবেন। সবাইকেই কথাগুলো মানার অনুরোধ করছি।

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের চেয়ে ঘূর্ণিঝড় হামুন কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছে। তবে নোয়াখালীকে ৭ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে এই সংকেত আরও বাড়তে পারে বা কমতেও পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের ফলে দ্বীপ হাতিয়াসহ নিম্নাঞ্চাল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। নলচিরা ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন হতে পারে। আমরা সাড়ে চার হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রেখেছি। কোথাও বেড়িবাঁধের ভাঙনের খবর পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় নোয়াখালী জেলার অধীন সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ১০২টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপকূলে আট হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার সব সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়সহ ৪৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নগদ টাকা, চাল ও গম মজুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মস্থলে এবং জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় হামুন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাসিব আল আমিন/এমএএস