কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া রবিউল (৮) ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো তার পরিবারের খোঁজ মেলেনি। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রবিউলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জান্নাত আক্তার নামে এক নারী। দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে রবিউলের দেখাশোনা করছেন তিনি। 

জান্নাত আক্তার জানান, গতকাল ট্রেন দুর্ঘনায় আহত হয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিল রবিউল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখান থেকে তাকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন তিনি। তারপর থেকে তার চিকিৎসাসহ সব বিষয় দেখাশোনা করছেন। তবে তার পরিচয় জিজ্ঞাস করলে সে একেক সময় একেক কথা বলছে। 

তিনি বলেন, গতকাল রাতে জ্ঞান ফেরার পর স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছিল না রবিউল। পরে অস্পষ্ট সুরে রবিউল জানায় বন্ধুর সঙ্গে ট্রেনে উঠেছিল সে। তার বাবার নাম একবার বলছে মিলন মিয়া একবার বলছে রবিউল। তার মা মারা গেছে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তার কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে একেকবার একেক কথা বলে। একবার বলে ঢাকা, একবার বলে বি-বাড়িয়া, আবার বলে রায়পুরায়। তবে সে কয়েকবার কওমি ঈদগাহ মাঠ নামে একটি স্থানের কথা বলেছে। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমি তার পাশে আছি।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে বেডে শুয়ে আছে রবিউল। তার হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তদারকিতে অনেকটা সুস্থ হয়েছে রবিউল।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত নার্স কল্পনা বানু বলেন, মুখে আঘাত পেয়ে ঠোঁটের ওপরের মাড়ি ফেটে গেছে শিশুটির। দুটি সেলাই লেগেছে সেখানে। এছাড়া দাঁতেও হালকা আঘাত আছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এক নারীর তত্ত্বাবধানে আছে শিশুটি।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. বুলবুল আহমেদ জানান, আহত রবিউলকে হাসপাতালে আনার পর থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে এখনো তার পরিচয় কিংবা পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে করে বাচ্চাটি তার পরিবারকে ফিরে পায়। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনও কাজ করছে। 

গতকাল সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জগন্নাথপুর এলাকায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এগারসিন্দুর গোধূলী ও ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মালবাহী  ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এ দুর্ঘটনায় ৭৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের মরদেহ ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের মরদেহ শনাক্ত করতে পারেনি কেউ। 

আরএআর