কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে আন্তঃনগর এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে তারা নিহত হন।

নিহতরা হলেন– ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতি ইউনিয়নের বনহাটি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া, তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার, তাদের ছেলে সজীব মিয়া এবং ইসমাইল মিয়া।

নিহত সুজনের ভাই স্বপন মিয়া বলেন, আমার ভাই ঢাকার মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সেখানে তিনি ভ্যানে ডাব বিক্রি করে সংসার চালাতেন। গত শুক্রবার বড় ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়িতে যান। এরপর অনুষ্ঠান শেষে আজ ট্রেনে করে ঢাকায় আসছিলেন। পথে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ভাইয়ের পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমিও ঢাকায় ফিরছিলাম। তবে দুর্ঘটনার সময় আমি পাঁচ নম্বর বগিতে থাকায় বেঁচে গিয়েছি।

এদিকে, দুর্ঘটনার ৭ ঘণ্টা পর ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে অতিক্রম করেছে।

রাত ১১টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, কালনী এক্সপ্রেস ভৈরব স্টেশন ছেড়ে সিলেটের পথে রওনা হয়েছে। অন্য ট্রেনও এখন চলাচল করবে।

এর আগে রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার আছেন। যাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী ট্রেন দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী ট্রেনটি উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে। খুব তাড়াতাড়ি ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের কাছাকাছি জগন্নাথপুর এলাকায় ঢাকাগামী এগারসিন্দুর ও ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী একটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা উদ্ধারকাজে যোগ দেন।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল, আর যাত্রীবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায়। ভৈরব জংশনের আউটার পয়েন্ট ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এসময় যাত্রীবাহী ট্রেনের তিনটি বগি উল্টে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এদিকে প্রথমে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর জানান। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানান। তবে পরে রাত ৮টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোট ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন।

এসএসএইচ