জলে ভাসা পূজামণ্ডপ দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়
রংপুর মহানগরীতে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এ উৎসবে নজর কাড়ছে রং-বেরঙের সাজসজ্জা আর দৃষ্টিনন্দন পূজামণ্ডপগুলো। প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যতিক্রমধর্মী পূজামণ্ডপগুলো আলোচনায় রয়েছে। বিশেষ করে পূজারি ও দর্শনার্থীদের কাছে টানছে নৌকার আদলে জলে ভাসা একটি পূজামণ্ডপ। শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবে বাড়তি আকর্ষণ নিয়ে সাজানো ভাসমান এ মণ্ডপে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
রংপুর মহানগরীর সাতগাড়া চড়কবাড়ী পূর্বপাড়া এলাকার একটি পুকুরে নজরকাড়া ভাসমান পূজামণ্ডপটি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমা। বর্ণিল আলোকসজ্জা আর মনকাড়া ঢাকঢোলের তাল ও গানে উদ্বেলিত হচ্ছেন আগত দর্শনার্থীসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সাতগাড়া স্মৃতি সংঘের আয়োজনে দুর্গা মন্দিরের সভাপতি ভবানী কুমার রায়ের পুকুরে ব্যতিক্রমধর্মী এই পূজামণ্ডপটি ভাসছে।
বিজ্ঞাপন
শুধু রংপুর মহানগরী নয়, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সকাল থেকে রাত অবধি উপচে পড়া ভিড় করছেন এ মণ্ডপ দেখতে। সেখানে ভাসমান পূজামণ্ডপের রয়েছে শিব ভোলানাথের প্রতিমা। এ ছাড়া জমকালো লাইটিং ও পানির নজরকাড়া ফয়োরায় শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজনকে রঙিন করে তুলেছে। ঢাকঢোলের হৃদয় নাড়া বাজনা আর আরতিতে ফুল, ধূপ ও আগরে ছড়াচ্ছে সম্প্রীতির সৌরভ।
শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী ভক্ত ও অনুসারীদের আগমনে মুখর এ মণ্ডপে প্রতিমার সামনে প্রার্থনা করছেন পুণ্যার্থীরা। মনের বাসনা পূরণের আকাঙ্ক্ষায় দেব-দেবীকে প্রণাম করছেন কেউ কেউ। সবার চাওয়া এই পূজা অশুভ শক্তির অবসান ঘটাক এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সমাজে মানুষকে সমৃদ্ধ করুক। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার এই উৎসবে শামিল হয়েছেন অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজনও।
নগরীর কলেজ রোড আদর্শপাড়া থেকে ভাসমান পূজামণ্ডপ দেখতে আসা সুবাস চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে পূজামণ্ডপ দেখছেন। অনেকের মুখে জলে ভাসমান পূজামণ্ডপের কথা শুনেছেন। এটা দেখার আগ্রহ থেকেই চড়কবাড়ী পূর্বপাড়া এলাকায় এসেছেন। ভাসমান মণ্ডপটি দেখে তার ভালো লেগেছে। এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী মণ্ডপ পূজারিদের পাশাপাশি সাধারণ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে বলে তিনি মনে করেন।
তাপস ঘোষ নামের আরেক যুবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন নতুন আঙ্গিকে সাজানো পূজামণ্ডপগুলো সব সময় বাড়তি আকর্ষণ ছড়ায়। এটাও দেখে তেমনটা মনে হয়েছে। পুকুরের পানিতে এত সুন্দর করে নৌকায় ভাসমান মণ্ডপ তৈরির চিন্তাভাবনা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। আমি পুরো মণ্ডপটি ঘুরে দেখেছি, আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। চারদিকটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরে বেড়াতে আসা স্বপ্নিল মজুমদার তৃষ্ণা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর দুর্গোৎসবে গ্রামে আনন্দ করার পাশাপাশি রংপুর শহরেও ছুটে আসি। এই শহরে দীর্ঘদিন ছিলাম, এখানে সব সময় পূজাতে একটা ব্যতিক্রম কিছু নজর কাড়বেই। এবার এসেও তাই দেখলাম। ভাসমান পূজামণ্ডপটি ভালো লেগেছে। পরিবারের ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে অনেকগুলো মণ্ডপ ঘুরেছি।
পুকুরে নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা ভাসমান পূজামণ্ডপ প্রসঙ্গে সাতগাড়া চড়কবাড়ী পূর্বপাড়া দুর্গা মন্দিরের সভাপতি ভবানী কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে প্রতি বছরই এমন আয়োজন করা সম্ভব। গত কয়েক বছরে করোনার কারণে সেভাবে আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। আর ১৭ বছর পর এই ভাসমান মণ্ডপ করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় সামনের বছর আরও বড় আয়োজন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই আসছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি কারও সমস্যা হবে না। নগরীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকেও পূজারি এবং দর্শনার্থীরা সন্ধ্যার পর থেকে মণ্ডপে ভিড় করছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে গত ২০ অক্টোবর শুরু হওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে এবার রংপুর জেলায় ৯৫৭টি মণ্ডপে চলছে পূজার আয়োজন। এরমধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই রয়েছে ১৫৭টি পূজামণ্ডপ। নির্বিঘ্নে উৎসব আয়োজন সম্পন্ন করতে সিসি ক্যামেরাসহ চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রংপুর জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুশান্ত ভৌমিক বলেন, এবার রংপুর জেলার ৯৫৭টি মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সম্প্রীতির এই জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব ধর্মালম্বীদের কাছে আমরা সহায়তা চাই।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি খোকন সরকার জানান, ২০ অক্টোবর মহালয়ের মধ্য দিয়ে এই ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়েছে। এবার ঘোড়ায় চড়ে আসা দেবী দুর্গা মহাদশমীতে ঘোড়ায় করেই ফিরবেন। আদ্যাশক্তি মহামায়ার পার্বতী বা অম্বিকা রূপ হলেন দেবী দুর্গা। শক্তিরূপিনী দুর্গা এই বিশ্বের সমস্ত শক্তির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তিনি স্বয়ং মহাদেবের অংশ। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে মর্ত্যদেবীর আগমন ঘটে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে জানান, রংপুর মহানগর এলাকার আওতাধীন পূজামণ্ডপগুলো সিসিটিভির আওতায় আনার পাশাপাশি চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পূজা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ