চিত্রা নদীর পাড়ে ছোট্ট জেলা নড়াইল। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত জেলা হিসেবে পরিচিত। বীর উত্তম মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী, ফজলুল হক মন্ত্রিসভার মন্ত্রী সৈয়দ নওশের আলী, তেভাগা আন্দোলনের প্রধান নেতা অমল সেন, বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানসহ অনেক গুণী মানুষের জন্ম এখানে। তবে নড়াইল নামটি যিনি পুরো দেশসহ বিশ্বের বুকে পরিচিত করেছেন তিনি জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত ‌‘ম্যাশ’ এই চিত্রার আলো-বাতাসেই বেড়ে উঠেছেন। 

এ চিত্রা নদীর পাড়েই আনন্দ-বিনোদনে একটি দিন কাটিয়েছেন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট’ এর সারাদেশের খবরের ফেরিওয়ালারা। নড়াইল শহরে দেশের সব বিভাগীয় প্রধান, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের নিয়ে মিলনমেলার আয়োজন ছিল শুক্রবার (২০ অক্টোবর)। যদিও এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। 

মিলনমেলার অতিথি হিসেবে ঢাকা পোস্টের বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ) মাহাবুর আলম সোহাগ, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের এইচ এম গোলাম মুর্তজা, সহকারী ব্যবস্থাপক (এডমিন-এইচআর) তানভীর কবিরসহ অংশগ্রহণকারী অর্ধশত প্রতিনিধি রাতেই পৌঁছান নড়াইলে। এরপর সবাই মিলে হাজির হন মাশরাফির বাসায়। সেখানে সাক্ষাৎ হয় মাশরাফির মা হামিদা মর্তুজার সঙ্গে। প্রায় আধঘণ্টার প্রাণবন্ত আড্ডায় ছেলে কৌশিক থেকে বাংলাদেশের মাশরাফি হয়ে ওঠার গল্প শোনান হামিদা। সেখান থেকে ফিরে রাতের খাবার শেষে নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাজির হন সবাই। সেখানে পরিচয় পর্বের পাশাপাশি প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে গল্প আর পরদিনের মিলনমেলা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা। 

শুক্রবার মিলনমেলার আয়োজনস্থল ছিল চিত্রা রিসোর্ট। সেখানে বল নিক্ষেপ, হাঁড়িভাঙা খেলা, খাওয়া দাওয়া, ঢাকা পোস্টে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, র‍্যাফেল-ড্রসহ নানা মজার মজার পর্ব ছিল দিনব্যাপী। সেই সঙ্গে চিত্রা নদীর পাড়ে চিত্রা রিসোর্টের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের একে অপরের সঙ্গে ক্যামেরার ক্লিকবাজিতে মেতে উঠেছিলেন সবাই। সবমিলিয়ে দিনভর আনন্দ-বিনোদনে ভরে উঠে মিলনমেলা।

হাঁড়িভাঙা খেলায় মেতে উঠেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকরা

বিকেলে আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে ছিল ‌‘পদ্মাসেতু : উন্নয়ন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা। যেখানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা পোস্টের বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদীসহ অংশগ্রহণকারীর অনেকেই। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে থই থই জলরাশি আর খরস্রোতার মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জাতীয় স্থাপনা পদ্মা সেতুকে ঘিরে মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস আর দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সম্ভাবনার কথা। 

সবশেষে র‍্যাফেল-ড্র তে মজার মজার ২৬টি পুরস্কারে বাড়তি বিনোদন পান সবাই। খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ মিলনের নেতৃত্বে বিভাগীয় টিম সমন্বয় করে পুরো আয়োজন সফল করেছেন। 

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবে একে অপরের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময় যেন শেষ হয়ে এলো দ্রুতই। ফিরতে হবে যার যার কর্মক্ষেত্রে। বিদায়বেলায় সকলের মাঝে অভিন্ন উপলব্ধি- ‘যদি সময় পেতাম আরও একটু’।

তবুও সময় ফুরিয়ে যায়। ফিরতে হয় নিজস্ব গন্তব্যে। তবে মনে রয়ে যায় আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশার পারদ, ‘আবারও দেখা হবে নতুন কোনো শহরে। মিলবো সবাই এমনই এক মিলনমেলায়, মাতবো সবাই প্রাণের উচ্ছ্বাস আর হাসি-খেলায়।’

 এএএ