২০১৫ সালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে দুই শয্যা বিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ওয়ার্ড উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকনিশয়ান ও জনবলের অভাবে চালু হয়নি আইসিইউ ওয়ার্ড। এতে প্রায় আট বছর ধরে তালাবদ্ধ থাকায়  নষ্ট হয়ে গেছে আইসিইউ ওয়ার্ডের সরঞ্জাম। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এদিকে জামালপুরের মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউয়ের প্রয়োজন হলেই ছুটতে হয় বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে ও ঢাকায়। মুমূর্ষু রোগীদের ময়মনসিংহ‌ বা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

জেলার সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, সরকার প্রায় কোটি টাকা খরচ করে দুই শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ওয়ার্ড স্থাপন করেছিল। চিকিৎসক সংকট সেটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় আইসিইউয়ের সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। এর দায় কে নেবে? নষ্ট হয়ে যাওয়া সরঞ্জাম দ্রুত মেরামত করে আইসিইউ চালু করার দাবি জানান তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে জামালপুরের ২৪ লাখ মানুষসহ পার্শ্ববর্তী শেরপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার মুমূর্ষু রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। সরকার হাসপাতালটিতে আইসিইউ চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০১৫ সালে ৩১ জানুয়ারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলায় দুই শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ওয়ার্ড উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু আট বছরেও চালু না হওয়ায় আইসিইউতে থাকা প্রায় কোটি টাকার আধুনিক সব যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে, আইসিইউ বিভাগ চালু করতে হলে তিনজন চিকিৎসক এবং তিনজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ) লাগবে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন সহযোগী কর্মীর প্রয়োজন। জনবল না থাকাই না থাকায় এটি চালু হয়নি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদর উপজেলার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীর স্বজন আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার ভাতিজা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তাকে যদি এখন জরুরিভাবে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের যেতে হবে ময়মনসিংহ না হয় ঢাকায়। জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। আর ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে গেলেই আইসিইউ পাওয়া যাবে এমনটাও নিশ্চিত না। আর ঢাকা প্রায় ২৭৫ কিলোমিটার দূরে। মুমূর্ষু রোগীদের এত দূরে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকে কি না আল্লাহই ভালো জানে। আমরা অনেকদিন আগে থেকেই শুনে আসছি আইসিইউ ওয়ার্ড আছে, তবে তালাবদ্ধ। সেটা চালু হয়নি। 

জামালপুর সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সেবা নিতে ময়মনসিংহ ও ঢাকাতে যেতে হচ্ছে। অনেকেই রাস্তায় মৃত্যুবরণ করছেন। আইসিইউ ওয়ার্ডের যে সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো দ্রুত মেরামত করে এবং জনবল নিয়োগ দিয়ে চালুর দাবি জানাই। 

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) ডা. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আইসিইউ ওয়ার্ডের সরঞ্জাম সচল রয়েছে কিনা তা সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জীতায় ইলেক্ট্রো মেডিকেল ওয়ার্কশপ (নিউমিও) এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে লিখিতভাবে চিঠিতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। নিউমিও থেকে একটি দল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ড পরিদর্শন করে একটি মেশিন সম্পূর্ণভাবে অকেজো এবং আরও একটি মেশিন মেরামত করলে সচল হতে পারে বলে জানায়। 

রকিব হাসান নয়ন/আরএআর