শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত চলমান। কার্তিকের শুরু এখন। শীতের শুরুর প্রান্তিক সময় যেন; ভোরে ও সন্ধ্যায় ধানের কচিপাতার ডগায় শিশির বিন্দু জমতে দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। রাত যত গভীর হয়, কুয়াশার ঘনত্ব এবং তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। টিনের ঘরের চালে যেভাবে কুয়াশা পড়ে, তাতে মনে হয় বৃষ্টি পড়ছে। নোয়াখালী জুড়ে সবুজ প্রান্তরে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে অনায়াসে। 

স্থানীয়রা বলছেন, কুয়াশা পড়লেও এ বছর শীত এখনও অনুভব হচ্ছে না। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করলেও দিনের বেলায় পড়ছে বেশ গরম। রাতভর টিনের চালে হালকা বৃষ্টির মতো টিপটিপ শব্দে ঝড়তে থাকে কুয়াশা। বিশেষ করে গাছ গাছালি ও ধানের শিষে জমতে দেখা যায় শিশির। সকালে হিমহিম আমেজ থাকলেও শেষ রাতে গায়ে কাঁথা জড়াতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) ভোরে সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে গ্রামগঞ্জ, চরাঞ্চলের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ও রাস্তাঘাট। দূর্বা ঘাসে কিংবা গাছের কচিপাতায় মুক্তার মতো আলো ছড়িয়ে ভোরের শিশির জানান দিচ্ছে শীত আসছে। সেইসঙ্গে অনুভূত হচ্ছে মৃদু ঠান্ডা।

গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি, বাজারে চোখে পড়ার মতো ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, ওলকপি, গাজর, টমেটো, শিমসহ ধনিয়া পাতার মতো শাকসবজি। অনেক কৃষক ব্যস্ত শীতের সবজি চাষে।

কুশায়া মাখা ভোরে মো. ইকবাল হোসেন নিজের শীতকালীন সবজি বাগান পরিচর্যা করছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেল থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করে। তারপর থেকে হিমশীতল বাতাস অনুভব হয়। রাতের বেলায় শীত পড়ে ফলে কাঁথা গায়ে দিতে হয়। আগাম শীতের অংশ হিসেবে ভোরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়। তখন কান ঢেকে কাজ কর্ম করতে হয়। কান না বেঁধে থাকা যায় না। আবার দিনের বেলায় সূর্য উঠার পরে গরম শুরু হয়। 

জামাল উদ্দিন নামের এক চা দোকানদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন কেবল কুয়াশা পড়ছে। শীত সেভাবে পড়ে নাই। রাতে কুয়াশার কারণে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূতি হয় কিন্তু দিনে প্রচণ্ড গরম পড়ে। তবে এখন থেকেই সন্ধ্যার পর দোকানে মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। 

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী মো. মনিরুজ্জামান। প্রতিদিন ভোরে সাইকেল নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশ দেখতে বের হয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে  নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জেলার সবকটি উপজেলায় বাড়িতে-বাড়িতে, ঘরে-ঘরে সর্দিকাশি, জ্বর, সর্বাঙ্গে তীব্র ব্যথা, শিশুদের ডায়রিয়া, ফাঙ্গাস এবং সারা শরীরে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বৃদ্ধ, নারী-শিশু, তরুণ -যুবক কেউই এ ধরনের রোগগুলো থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপপরিচালক মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকৃতি শীতের আগমন জানান দিচ্ছে। শীতকালীন ফসল আসতে শুরু করেছে। সবজির জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো শীতকাল। শীতকালীন শাকসবজিতে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, আয়োডিন প্রভৃতি।

হাসিব  আল আমিন/এএএ