কুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতির অডিও ফাঁস
‘কোটি টাকা লাগলে দিব, আমার কমিটি লাগবে’
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুয়েট ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি রুদ্রনীল সিংহের একটি অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এ অভিযোগ ওঠে। তবে তিনি ওই অডিও রেকর্ডকে ‘গায়েবি’ বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, ১০ অক্টোবর কুয়েটে ছয় সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে রুদ্রনীল সিংহকে। এ ছাড়া তরিকুল ইসলামকে সহসভাপতি, এ কে এম নিবিড় রেজাকে সাধারণ সম্পাদক, গোলাম রাব্বিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রাগীব আহসান ও সুজাউল করিমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ভাইরাল হওয়া ওই অডিওতে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘কমিটি হইলে এই মাসে হবে, না হলে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। কেন্দ্রই করে দেবে, সম্মেলন-টম্মেলন কিচ্ছু হবে না। সবাই যে যার মতো দৌড়াচ্ছে।’ এরপর তিনি বলেন, ‘চাচি ইন্ডিয়া ছিল, দেশে ফিরেছে। চাচি দুজনের নাম দিয়েছে। চাচিরে তো চেনেন, সে একবার নাম দিলে (কেন্দ্রীয় কমিটি) আর বদলায় না।’
অপর প্রান্ত থেকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘নাম তো আপনার আর নিবিড় (বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ কে এম নিবিড় রেজা) ভাইয়ের দিয়েছে।’ এরপর ছাত্রলীগ সভাপতির কণ্ঠসদৃশ ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এখন আপাতত ৫০ হাজার টাকা দেন। আর যেদিন কমিটি সাইন হবে, তার এক-দুই দিন আগে বড় একটা অ্যামাউন্টের টাকা লাগবে। ধরেন আমার কাছে কিছু আছে। আরও কিছু যদি লাগে, সেডা আপনারে বললাম। চেক দিল, আপনি দিয়ে দিলেন।’
অপর প্রান্তের ব্যক্তি তখন বলেন, আপনার দিক দিয়ে কি ক্লিয়ার আছে? উত্তরে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তি বলেন, ‘আমি অতি আত্মবিশ্বাসী হব না, তবে যতটুকু দরকার।’
কত টাকা লাগতে পারে এমন প্রশ্নে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, যদি এক কোটি টাকা লাগে, আমি এক কোটি টাকা দেব। কমিটি আমার লাগবে। যা লাগবে তা-ই দেব, তবে কমিটি লাগবে।’ টাকার পরিমাণ শুনে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি অবাক হলে তিনি বলেন, ‘এটা কথার কথা।’
ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি ব্যাংক বন্ধের কারণ দেখিয়ে ওই মুহূর্তে টাকা দিতে পারবেন না জানালে রুদ্রনীলের কণ্ঠসদৃশ ব্যক্তি বলেন, ‘কালকে পুরোটা না পারেন, কিছু টাকা দিতে পারবেন না? বাকিটা রোববারে দিলেন। আর ইনফরমেশন জানি কোনোভাবে লিক না হয়।’ অন্য প্রান্ত থেকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘আমি অন্য ধরনের ছেলে। আমি টাকা দিচ্ছি, তবে ভুলে গেলি হবে না আমারে।’ এরপর উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের মেয়াদকাল নিয়ে কিছু কথা হয় তাদের মধ্যে।
এ বিষয়ে রুদ্রনীল সিংহ গণমাধ্যমে বলেন, ‘ওই কথোপকথন আমার সঙ্গে না। ওটা একটা ভিত্তিহীন ও গায়েবি অভিযোগ। টেম্পারিং করে বানানো।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রুদ্রনীল সিংহ যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে তিনি অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করছেন। ২০২১ সালে কুয়েটে লালন শাহ হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি যে ৪৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়, তাদের মধ্যে সভাপতি রুদ্রনীল সিংহও ছিলেন। তবে উচ্চ আদালত ওই শাস্তি স্থগিত করেন।
এর আগে নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি ও হলে ভাঙচুরের অভিযোগে ২০১৬ সালে রুদ্রনীলকে এক টার্ম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। ওই বছরের এপ্রিলে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে আহত হন তিনি। এ ঘটনায় হল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
মোহাম্মদ মিলন/এএএ